বাংলাদেশের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা যেন রূপ নিচ্ছে এক অনিশ্চিত সংগ্রামে। নাগরিক নিরাপত্তার চিত্র ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে—যেখানে দুর্ঘটনা, অব্যবস্থাপনা ও সহিংসতা হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের বাস্তবতা।
ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ইট পড়ে প্রাণ হারানো, কিংবা পরিবারের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে গ্যাস বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনা আজ আর ব্যতিক্রম নয়। সড়কে নিয়ম মেনে চলেও ধনীর সন্তানের বেপরোয়া গাড়ির চাপায় প্রাণ হারাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
মানবাধিকার নিয়ে কথা বললে জীবনের নিশ্চয়তা নেই—অনেক ক্ষেত্রেই নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন প্রতিবাদীরা, কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের লাশও। গ্রাম থেকে শহরে কাজের খোঁজে এসে ফ্যাক্টরি ধসে প্রাণ হারানো কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে লাশ হয়ে ফেরা ছাত্রছাত্রীদের খবর এখন প্রায় নিয়মিতই শিরোনাম হচ্ছে।নারীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি, নিপীড়ন এবং ধর্ষণের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। খোলা ম্যানহোলে পড়ে শিশু নিখোঁজ হচ্ছে, এমনকি সামরিক বিমান দুর্ঘটনায় স্কুলগামী শিশুরাও যুক্ত হচ্ছে মৃত্যুর তালিকায়।
এইসব দুর্ঘটনা ও সহিংসতা আর বিচ্ছিন্ন নয়—এগুলো যেন এখন সিস্টেমেটিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটনার দায় স্বীকার তো দূরের কথা, কোনো বিচারও হয় না। প্রশাসনের অবহেলা, নিরাপত্তার অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি আজ বাংলাদেশকে পরিণত করেছে এক ভয়ঙ্কর সামাজিক বাস্তবতায়।
এক সময়ের স্বপ্নের দেশ বাংলাদেশ আজ অনেকের কাছে এক জীবন্ত মৃত্যুপুরীর প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্র, সমাজ ও প্রতিটি নাগরিকের কাছে এটি এক জেগে থাকা দুঃস্বপ্ন—যেখানে জীবনের মূল্য প্রতিনিয়ত হারাচ্ছে তার গুরুত্ব।