গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ১৯ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমা সুলতানা নিজেদের বাসায় শুকাতে দেওয়া কাপড় ঘরে আনার জন্য বারান্দায় যায়। পুলিশের ছোড়া গুলি মাথায় লেগে শহীদ হন নাঈমা। আর আজ ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান নাঈমার বড় বোন তাসপিয়া সুলতানার চোখের সামনেই বিধ্বস্ত হয়েছে। তাসপিয়া মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঘটনার পর তাসপিয়া বারবার অচেতন হয়ে পড়ছিল।
নাঈমা ও তাসপিয়ার মা আইনুন নাহার ‘নাঈমা সুলতানা’ নামের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘জুলাই এত অভিশপ্ত কেন। সবাই আমার বড় মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।’
গুলিতে শহীদ নাঈমা সুলতানার মাথার মগজ বের হয়ে গিয়েছিল। এক বছর পার হলেও মা আইনুন নাহার ও বোন তাসপিয়া সেই দিনের স্মৃতি ভুলতে পারেননি। বোন শহীদ হওয়ার পর তাসপিয়া এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। এরই মধ্যে আজ চোখের সামনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা দেখার পর থেকে তাসপিয়া বারবার অচেতন হয়ে পড়ছিল বলে জানালেন মা আইনুন নাহার।
টেলিফোনে আইনুন নাহারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে তাসপিয়া ক্লাস শেষ করে ঝালমুড়ি কিনতে গিয়েছিল। তা না হলে আজকে মেয়ের জীবনেও ভয়াবহ কোনো ঘটনা ঘটতে পারত।
আইনুন নাহার বলেন, ‘মেয়ে (তাসপিয়া) বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিল। তাকে প্রথমে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়। সেখানে আজকের ঘটনায় অনেক আহত রোগী রয়েছে। বাসা কাছে হওয়ায় মেয়েকে বাসায় এনে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, মেয়ে বারবার কাঁদছে। মাঝে মাঝে বলছে, ওদের (শিক্ষার্থী) কী হবে!
তাসপিয়া শারীরিকভাবে তেমন আঘাত পায়নি উল্লেখ করে মা আইনুন নাহার বলেন, একজন নারী পুলিশ সদস্য তাসপিয়াকে উত্তরার হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত নিয়ে এসে তাঁকে ফোন দেন। পরে তিনি মেয়েকে নিয়ে বাসায় আসেন।
২৫ জুলাই ছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী নাঈমা সুলতানার জন্মদিন। ১৫ বছরে পা দিত। তার আগেই ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে সে মারা যায়। আইনুন নাহার বলেন, বড় মেয়েসহ তাঁরা গত কয়েক দিন ভালো করে ঘুমাতে পারছেন না। অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটছিল। এর মধ্যেই আবার এত বড় একটি ধাক্কা।
নাঈমা ও তাসপিয়ার ছোট ভাই আব্দুর রহমানের বয়স ৯ বছর। সে–ও মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শেণিতে পড়ছে। তবে সে উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে স্কুলের অন্য শাখায় পড়ছে। বিমান আছড়ে পড়েছে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাসে।
নাঈমার বাবা গোলাম মোস্তফা থাকেন চাঁদপুরে, যেখানে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। মাসে এক–দুবার ঢাকায় আসেন। আইনুন নাহার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। মেয়ের ঘটনা শুনে তিনি চাঁদপুর থেকে ঢাকায় আসার জন্য রওনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলটসহ ১৯ জন এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬৪ জন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) হতাহতের এ সংখ্যা জানিয়েছে।