খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বেজপাড়া হায়াতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার নবগঠিত ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে ওঠা সকল অভিযোগকে ভিত্তিহীন, মনগড়া ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি ফাতেমা খাতুন। তিনি মাদ্রাসার দাতা পরিবারের পুত্রবধূ এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত সভাপতি।
২২ নভেম্বর, শনিবার সকাল ১০টায় কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সুপার মাওলানা একেএম আজহারুল ইসলাম সশরীরে উপস্থিত হয়ে এই প্রতিবাদ জানান।
মাদ্রাসার সুষ্ঠু পরিচালনাকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ‘ষড়যন্ত্রের জাল’ ছড়ানোর অভিযোগ এনে ফাতেমা খাতুন দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “বেজপাড়া হায়াতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার বর্তমান কমিটি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সকল বিধি-বিধান ও প্রজ্ঞাপন মেনেই গঠিত হয়েছে। মাদ্রাসার শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাই আমাদের একমাত্র অঙ্গীকার, কোনো ষড়যন্ত্রই সেই পথে বাধা দিতে পারবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তোলা অভিযোগের বিস্তারিত খণ্ডন করা হয়।
অভিযোগকারীদের দাবিকে সরাসরি অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়ে সভাপতি জানান, অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সভাপতি নির্বাচনে তিনজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন এবং আটজন ভোটার ভোট প্রদান করেন। নির্বাচনের ফলাফলে তিনি (ফাতেমা খাতুন) ৬ ভোট, ফেরদৌস হোসেন পলাশ ১ ভোট ও মাওলানা গোলাম সরোয়ার ১ ভোট পান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বিদ্যমান প্রবিধান মেনেই সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে।”
ভোটার তালিকায় একই নামের একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতিকে সুপার মাওলানা আজহারুল ইসলাম একটি ‘সাধারণ প্রশাসনিক ত্রুটি’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, এমন ভুল তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনের সুযোগ থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে কোনো অভিযোগ আসেনি এবং এটি নির্বাচনের ফলাফলে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি।
সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তোলা প্রশ্নকে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ বলে উল্লেখ করে ফাতেমা খাতুন বলেন, “আমি যথেষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন এবং আমার এইচএসসি/সমমানের সনদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত আছে। সভাপতি নির্বাচনের জন্য ডিগ্রী পাস আবশ্যক—এই তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিদ্যমান দাখিল মাদ্রাসা বিধিমালায় আমি উপযুক্ত।তিনি আরও জানান, দাতা প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য হিসেবে তার দায়িত্ব আরও বেশি।
কমিটি এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে মাদ্রাসার একজন জুনিয়র শিক্ষক আওয়ামী দোসর মো. শফিকুল ইসলামকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছে। কমিটি স্পষ্ট জানায়, এই শিক্ষক ব্যক্তিগত আক্রোশ ও স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মাদ্রাসার স্থিতিশীল পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। দাতা প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের নাম ব্যবহার করে দায়ের করা দেওয়ানি মামলাটির (দেঃ ২২৩/২৫) মূল উদ্দেশ্য মাদ্রাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা এবং অবৈধভাবে চাপ সৃষ্টি করা। কমিটি ও সুপারের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের’ অভিযোগকে ‘চরম মিথ্যাচার ও মানহানিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিটি জানায়, অনৈতিক সুবিধা বা পদ-পদবি না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে শফিকুল ইসলাম এমন মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছেন। যেহেতু কমিটির অধীনে কোনো নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি তিনটি সুস্পষ্ট আবেদন ও পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও জেলা প্রশাসন যেন দ্রুত এই অভিযোগগুলো তদন্ত করে বর্তমান কমিটি বিধিসম্মত—এই সত্যটি তুলে ধরেন। শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে তার ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য কঠোরভাবে সতর্ক করা হোক। মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের জন্য কমিটি শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরিশেষে মাদ্রাসার সুপার এবং সকল কমিটি সদস্যবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে ঘোষণা করেন, “আমরা মাদ্রাসার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। কোনো ষড়যন্ত্রকারীকে আমরা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব পালনে বাধা দিতে দেবো না।