বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। আপাতত মেডিকেল ভিসা ছাড়া অন্য কোনো ভিসা মিলছে না। অথচ প্রতিদিন ভারতীয়দের শত শত বিজনেস ভিসা দিচ্ছেন কলকাতার বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনার। এসব পাসপোর্টধারী যাত্রী বিজনেস ভিসায় সকালে বেনাপোল আসছেন। আবার বিকেলে ফিরে যাচ্ছেন। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে এ দৃশ্য প্রতিদিনের।
সরেজমিনে চেকপোস্টে দেখা যায়, এসব ভারতীয় যাত্রী বিজনেস ভিসায় লাগেজে করে ভারতীয় কম্বল, মোবাইল ফোন, বিদেশি মদ, বিয়ার, শাড়ি, থ্রি-পিস, চকলেট, ফুচকা, তৈরি পোশাক ও কসমেটিকস সামগ্রী নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্টে আসেন। চেকপোস্টের বিভিন্ন দোকানে তারা সেসব মালামাল বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। যাদের লাগেজ পার্টি নামে সবাই চেনে।
স্থানীয়রা জানান, এই মালামাল কিনতে যশোর-খুলনাসহ আশপাশের এলাকার শত শত নারী-পুরুষ বেনাপোল চেকপোস্টে আসেন। উভয় দেশের প্রশাসনের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ ব্যবসা। বিনা শুল্কে অবৈধ পণ্য দেশে প্রবেশ করায় মারাত্মক হুমকির মুখে দেশীয় শিল্প। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। বিজিবি বলছে, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে তারা দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করছেন।
‘এক মাসে ২৫ হাজার ৬৭৮ জন ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করেন। এদের মধ্যে ভারত থেকে এসেছেন ১২ হাজার ১১২ জন ও ভারতে ফিরে গেছেন ১৩ হাজার ৫৬৬ জন। ২৫ হাজার ৬৭৮ জন যাত্রীর মধ্যে বিজনেস ভিসায় মালামাল নিয়ে এসেছেন প্রায় ২৪ হাজার ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী।’
চেকপোস্ট সূত্র জানায়, ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভিসা না দেওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। তবে ভারত থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ ভারতীয় নাগরিক পাসপোর্টের মাধ্যমে বিজনেস ভিসায় বেনাপোল সীমান্তে প্রবেশ করছে। এদের ভিসা দিচ্ছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন। এদের বেশিরভাগ কম্বলসহ নানা চোরাচালানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
সূত্র জানায়, বেনাপোল সীমান্তের ওপারে ভারতের বনগাঁ, অশোকনগর, হাবড়া, হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর ও পেট্রাপোলে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয়। তারা প্রতিদিন তিন-চারটি ব্যাগভর্তি করে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্টে আসেন। এসব মালামাল চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নারী-পুরুষরা সেখানকার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তারা আবার নিজ দেশে ফিরে যান। বিজনেস ভিসা থাকায় যাতায়াতে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। এ কাজে সহযোগিতা করছে দু’দেশের কাস্টমসসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।
ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, গত এক মাসে ২৫ হাজার ৬৭৮ জন ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত করেন। এদের মধ্যে ভারত থেকে এসেছেন ১২ হাজার ১১২ জন ও ভারতে ফিরে গেছেন ১৩ হাজার ৫৬৬ জন। ২৫ হাজার ৬৭৮ জন যাত্রীর মধ্যে বিজনেস ভিসায় মালামাল নিয়ে এসেছেন প্রায় ২৪ হাজার ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী।
‘উভয় দেশের প্রশাসনের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ ব্যবসা। বিনা শুল্কে অবৈধ পণ্য দেশে প্রবেশ করায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্প। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। তবে বিজিবি বলছে, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে তারা দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করছেন।’
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, লাগেজ পারাপারকারী যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ব্যাগ হিসেবে টাকা নেন চেকপোস্টের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। এদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের সঙ্গে রফাদফা করে লাগেজ ব্যবসায়ীরা শুল্ক ছাড়াই পণ্য পাচারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মালামাল আসছে।
বেনাপোল দিয়ে যাতায়াতের সময় সাধারণ যাত্রীদের ব্যাগেজ স্ক্যানিং বা তল্লাশির নামে নানাভাবে হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। দুটি স্ক্যানিং মেশিনে চেকিং ও চার জায়গায় অহেতুক ব্যাগেজ তল্লাশি করেন কর্মকর্তারা। ব্যাগপ্রতি টাকা না দিলে ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে আনা পণ্যসামগ্রী কাস্টমসে জমা দেওয়া হয়। সেখানে লাগেজ পার্টির সদস্যরা দিব্যি মালামাল নিয়ে চলে আসেন বিনা বাধায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের কোনো হয়রানির অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। লাগেজ পার্টি বন্ধে আমরা প্রতিনিয়ত চেকপোস্টে মালামাল ডিএমের মাধ্যমে আটক করছি। সেটা পরে যাত্রীরা কাস্টমস হাউজ থেকে শুল্ক দিয়ে ছাড় করে নিচ্ছেন।’
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীরা বৈধভাবে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। তারা সঙ্গে করে কী মাল আনছেন সেটা কাস্টমস ও বিজিবি চেকিং করে। ওখানে আমাদের কোনো চেকিংয়ের ব্যবস্থা নেই। গোপন কোনো সংবাদ পেলে পুলিশ অভিযান চালায়।’
‘ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভিসা না দেওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। তবে ভারত থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ ভারতীয় নাগরিক বিজনেস ভিসায় বেনাপোল সীমান্তে প্রবেশ করছে। এদের ভিসা দিচ্ছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন। এদের বেশিরভাগ কম্বলসহ নানা চোরাচালানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’
এ বিষয়ে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালানি বন্ধে বিজিবি দিন-রাত কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার অবৈধ পণ্য আটক করা হচ্ছে। এছাড়া টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে আনা পণ্য জব্দ করা হয়। এভাবে ভারতীয় দ্রব্যসামগ্রী চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।’