রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তিনটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মার্কেটিং, পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া জেন-জি আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের এক ম্যাচে মার্কেটিং ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার জের ধরে সোমবার পরিসংখ্যান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী চকবাজার এলাকায় মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, চকবাজার এলাকায় মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাটি জানাজানি হলে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে আসেন। এসময় উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত ঘোষ মাথায় গুরুতর জখম হন এবং পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেটিং ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে প্রধান ফটক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফটকের ভেতরে রাখা ছবির ফ্রেমও ভাঙচুর করা হয়।
এরপর উত্তেজিত দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এ সময় স্বাধীনতা স্মারক মাঠে অবস্থানরত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী সংঘর্ষস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করলে মার্কেটিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী হঠাৎ তাঁর ওপর চড়াও হয়ে লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও একত্রিত হয়ে প্রধান ফটকের দিকে অগ্রসর হন এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। এক পর্যায়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিছু হটে একাডেমিক ভবন-৩-এ আশ্রয় নেন।
পরে পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী একযোগে ধাওয়া দিলে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রাণভয়ে একাডেমিক ভবন-৩-এর ভেতরে আশ্রয় নেন। তারা ভবনের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ও টয়লেটে লুকিয়ে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে ভবনটির মূল গেটে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক, রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও ছাত্রনেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা তাতে কর্ণপাত না করে ভবনের তালা খুলে নিচতলায় থাকা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষগুলোর দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন। এসময় সংঘর্ষে মার্কেটিং বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নিলয় চোখে গুরুতর জখম হন এবং তিনি তখনও ভবনটির ভেতরে আটকা ছিলেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে তাঁরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে না।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিসংখ্যান ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবন-৩-এর সামনে অবস্থান করছিলেন, আর মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবনটির ভেতরে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।
এদিকে, উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রশাসনিক ভবনের সিন্ডিকেট রুমে জরুরি সভায় বসেছেন। তবে এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।