বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের (বেরোবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজস্ বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পা (২৩) আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রংপুর শহরের সরদার পাড়ায় অবস্থিত ‘আপন ছাত্রী নিবাসের’ ৪০৪ নম্বর কক্ষ থেকে পুলিশ তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
টুম্পা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজস্ বিভাগের ছাত্রী ছিলেন এবং ছাত্রী নিবাসের ওই কক্ষে একাই বসবাস করতেন। প্রাথমিক তদন্তে প্রেমঘটিত বিষণ্নতা থেকেই এই আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও, তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানান তাজহাট থানার তদন্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।
ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, কালের কণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবুল খায়ের জায়েদ ছাত্রী নিবাসের সামনে লাইভ করার সময় উত্তেজিত কিছু শিক্ষার্থী বাধা প্রদান করেন এবং লাইভ বন্ধ করতে বাধ্য করেন। পরে প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সাজেদুল ইসলাম ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে তার মোবাইল ফোন ও আইডি কার্ড কেড়ে নেওয়া হয় এবং তাকে গালাগাল করে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সাজেদুল ইসলাম ও তার সঙ্গে থাকা এক শিক্ষার্থী নকিবুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ফেরার সময়ও প্রধান ফটকের সামনে পুনরায় হামলার শিকার হন। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থী এগিয়ে এসে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। এ সময় ধস্তাধস্তিতে এক সাংবাদিকের শার্ট ছিঁড়ে যায় এবং নকিব নামের শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন।
ঘটনার পর ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন এবং পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান সাংবাদিক লাঞ্ছনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এদিকে, সাংবাদিক সমাজ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর এমন হামলা কেবল ব্যক্তি নয় সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি তারা মাঠপর্যায়ে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।