সাগরে গভীর লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও আকাশে ঘন মেঘ থাকায় চাপা আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আলু চাষীরা। এরই মধ্যে অধিক লাভের আশায় গলাচিপার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কমবেশি আলু চাষ করেছেন চাষিরা।উপজেলার আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ করে মুনাফার আশায় চাষিরা তাদের ধানী জমিগুলোর ধান দ্রুত কেটে পরিস্কার করে আলু চাষ করছেন।শনিবার (২১ডিসেম্বর) উপজেলা কৃষি অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অধিক লাভের আশায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের উঁচু জমিগুলোতে আলু চাষ করেছেন চাষিরা। ডায়মন্ড ও কার্টিনাল আলু রোপণের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় তা বিক্রির উপযোগী হয়। কিছুটা অধিক পুষ্টিকর ও তুলনামূলক কম সময় লাগায় এ আলু চাষ করে লাভবান হওয়া যায় সহজেই। যারা সঠিকভাবে জমিতে যত্ন করতে পারবেন, তাদের লোকসান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই গতবারের মতো এবারও আলু চাষে নেমেছেন চাষিরা।গলাচিপা সদর, পানপট্রি, ডাকুয়া, গোলখালী চিকনিকান্দি, রতনদী তালতলী, বকুলবাড়ীয়া, আমখোলা, কলাগাছিয়া, গজালিয়া, চরকাজল, চরবিশ্বাস ইতোমধ্যে উপজেলার আলু চাষিরা প্রস্তুতকৃত জমিতে আলুর বীজ রোপণ করেছেন। চাষিদের কেউ কেউ সেই জমি খড়কুটো দিয়ে ঢাকতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। গলাচিপা সদর ইউনিয়নের রতনদি, মুরাদনগর, চরখালী, বোয়ালিয়া ও পক্ষিয়া ঘুরে দেখা যায়, অত্র অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে কৃষকরা আলু আবাদ করেছেন।গলাচিপা সদর ইউনিয়নের আনিসুর রহমান, মোশারেফ চৌকিদার, মিজানুর রহমানসহ একাধিক চাষি জানান, গত কয়েক বছর ভালো দাম পাওয়ায় তারা এখন আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ।তারা আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারেও আলুর বাম্পার ফলন হবে । কৃষি অফিস থেকে আলু চাষের প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত আলু সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করলে তারা বেশি লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আলু চাষে আরও আগ্রহী হবেন বলেও জানান চাষিরা।তারা জানান, চলতি বছর তাদের দ্বিগুণেরও বেশি দামে আলুর বীজ কিনতে হয়েছে। এ বছর তারা ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে আলু ক্রয় করেছেন। সার, ঔষধ ও চাষাবাদ খরচ বিঘাপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। তবুও সবমিলিয়ে আলুতে অধিক লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। কঠোর পরিশ্রম আর অর্থ ব্যয় শেষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোই তাদের স্বপ্ন।তারা আরো জানান, প্রতিবছর অতিরিক্ত মুনাফার লক্ষ্যে তাদের মতো অনেকেই আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে চলতি বছর আলুর বীজের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি এবং পর্যাপ্ত বীজের চাহিদা পূরণ না হওয়ায় অনেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আলু চাষ করতে পারেনি। বর্তমানে বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করায় তারা কিছুটা শঙ্কিত। সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়ার আলু চাষী মোজাফফর জানান, গত মৌসুমে আলুতে ভালো দাম পাওয়ার সে লাভবান হয়েছেন। তাই তিনি এবারও আলু চাষে মনোযোগ দিয়েছেন। ফলন ভালো হলে অধিক মুনাফাও হবে। গত বছর তিনি সাড়ে ১ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন এবং প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন। এ বছর খরচ বেশি থাকা সত্ত্বেও ১০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছেন। বীজের দাম বেশি থাকায় এবং শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় গতবারের চেয়ে এবার আলু চাষের খরচ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।গলাচিপা সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের কামাল মৃধা, মহাসিন সরদার, গিয়াসউদ্দিন হাওলাদার, টিপু তালুকদার নামে কয়েকজন শ্রমিক জানান, জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ হচ্ছে এতে তারা দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন ও দিন শেষে তারা পাচ্ছেন ৫০০-৭০০ টাকা। এ আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে।অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. আকরামুজ্জামান জানান, শুকনো মাটির জমি আলু চাষের জন্য উপযোগী। আলু চাষের জন্য এ অঞ্চলের বেলে ও দোঁ-আশ মাটি বেশ উপযোগী। গলাচিপা বিভিন্ন এলাকায় তুলনামূলক উঁচু জমিগুলোতে আলু চাষ করা হয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় অনেকেই আলু চাষ করছেন। এ উপজেলায় আনুমানিক প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস আলু চাষীদেরকে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ এলাকার আলু চাষীরা বেশ লাভবান হবে।