জীবিকার তাগিদে ধারদেনা করে ভিয়েতনামে পাড়ি দিয়েছিলেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পারভেজ মণ্ডল (২১)। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গত ৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভিয়েতনামে এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। এদিকে অসহায় পরিবারের শেষ আশাটুকু সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে দিলেও, এবার সেই নিহত যুবকের মরদেহ দেশে ফেরার খবরে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে তার পরিবার। অবশেষে, আগামী ২৭ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের সহায়তায় পারভেজের লাশ দেশে আসছে বলে জানা গেছে। ছেলের নিথর দেহ ফিরে পাওয়ার খবরে কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছেন শোকাহত মা।
নিহত পারভেজ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের মদাপুর গ্রামের কিয়ামুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। পারভেজের বাবা কিয়ামউদ্দিন মণ্ডল পেশায় ভ্যানচালক, মা হাসি বেগম গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে পারভেজ ছিলেন মেঝো। বড় বোন স্বর্ণা খাতুন এবং ছোট ভাই ইয়া হাবিব বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
জানা যায়, পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ও উন্নত জীবনের আশায় পারভেজ প্রায় ১৩ মাস আগে ৭ লাখ টাকা ঋণ ও ধারদেনা করে মা-বাবা, বড় বোন ও ছোট ভাইকে রেখে ভিয়েতনামে যান। সেখানে একটি কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
প্রায় এক বছর আগে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তিনি ভিয়েতনামে যান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলযোগে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা তাকে সড়কে পড়ে থাকতে দেখে সাথে থাকা আইডি কার্ডের সূত্রে পুলিশে খবর দেন। পরে শুক্রবার ভিয়েতনাম প্রবাসী সাকিব মিয়া পারভেজের মৃত্যুর খবর তার পরিবারকে জানান। এ খবর শোনার পর শোকে ভেঙে পড়েছে পরিবার। এই দুর্ঘটনার পর থেকেই পারভেজের পরিবার তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার খরচ জোগাড় নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায় ছিল।
এদিকে নিহত পারভেজের মা হাসি বেগম ছেলের লাশ দেশে ফেরার খবর শুনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, “আমি অসুস্থ, আমার ছেলেই আমার চিকিৎসার খরচ দিত। সে বলতো, আম্মু, আমি কামাই রোজগার করে যখন দেশে যামু, তোমাগো জন্য কিছু করমু, তখন বিয়া করমু। তুমি আমার জন্য দোয়া কইরো। এত কষ্টের পর বাংলাদেশ সরকারের মানবিক সহায়তার ফলেই ছেলের শেষ চিহ্নটুকু দেশে ফিরে আসছে এতে কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছি। ভিয়েতনাম দুতাবাসের কাউন্সেলর স্যার সার্বক্ষনিক খোঁজখবর রাখছেন। মৃতদেহ দেশে আসবে বৃহঃস্পতিবার সকাল ১০ টায়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে কর্তৃপক্ষ।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শোকের মাঝেও, ছেলের লাশ ফিরে পাওয়ার খবরে স্বস্তির ছায়া নেমে এসেছে পরিবারে। মরদেহ পরিবহনে এয়ারপোর্ট থেকে ৩৫,০০০ টাকার চেক প্রদান করা হবে। এছাড়াও ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের মাধ্যমে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ এবং অন্যান্য আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।