মাদারীপুরের খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন সাইফুল সরদার (৩৫)। ওই পদে থেকে এলাকায় হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। নিজের চাচা হোসেন সরদারকে গত বছর ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বে হাতুড়িপেটা করে পঙ্গু করে দিয়েছিলেন। হোসেন সরদারও ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিক। তিনি মনের মধ্যে ক্ষোভ ধরে রাখেন। পরে স্থানীয় হাটের ইজারা নেন সাইফুল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বালুর সিন্ডিকেট টিকিয়ে রাখতে তিনি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন হোসেন সরদার। প্রতিশোধ নিতে সাইফুলের প্রতিপক্ষদের সংঘবদ্ধ করেন। এরপর গত শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে সাইফুলসহ তিনজন নিহত হয়। মূলত হাট-বাজারের ইজারা দখলে নেওয়া ও বালু ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে সৃষ্টি হওয়া দ্বন্দ্বের কারণে গত শনিবার মাদারীপুর সদরের মঠেরবাজার এলাকায় তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর তাদের বসতবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে নিহত সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে ৪৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিতেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এবং অন্য পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম। নিহত সাইফুল বাহাউদ্দীন নাসিম সমর্থিত খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আর তার প্রতিপক্ষ অভিযুক্ত হোসেন সরদার (৬০) ছিলেন শাজাহান খান সমর্থিত আওয়ামী লীগ নেতা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাইফুল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এতে স্থানীয়রা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। পরে পা ভাঙার প্রতিশোধ ও পুরো সিন্ডিকেট দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন হোসেন সরদার। এ নিয়ে মাসখানেক আগে দুই গ্রুপের মধ্যে হামলা ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে গত শনিবার হামলা চালিয়ে সাইফুল ও তার ভাই আতাউর সরদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হোসেন সরদারের লোকজন। একই সঙ্গে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় নিহত সাইফুলের আরেক ভাই আতাউর সরদার (৪০) ও চাচাতো ভাই পলাশ সরদারসহ (১৫) আরও আটজনকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠালে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলাশ সরদারের মৃত্যু হয়। নিহত সাইফুলের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী ড্রেজারের ব্যবসা করত। সরকারের কাছ থেকে হাট ইজারা নিয়েছিল। আমাদের হাট-ঘাট ব্যবসা-বাণিজ্য দখলে নিতে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমার স্বামী ব্যবসা করে আর ওরা টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। গত বছর আমার স্বামীর সঙ্গে হোসেন সরদারের একটা বিরোধ হয়েছিল। সেই ক্ষোভ ধরেই হোসেন সরদার তার নিজের জমি সাত লাখ টাকায় বিক্রি করে এলাকার সব লোকজনকে নিয়ে আক্রমণ করে। আমরা পালানোর চেষ্টা করি। পরে আমাদের বাড়ি লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার স্বামীসহ দুই ভাসুর তখন মসজিদে পালান। সেখানেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’ মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বালু ব্যবসা ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই ঘটেছে। এই মামলার ভিকটিম সাইফুল তার বংশীয় চাচা হোসেন সরদারকে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছিলেন। সেই ঘটনায় মামলা হলে জেলা পুলিশ সাইফুলকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তী সময়ে বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।