মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন, এমন খবর পেলেই ছুটে যান তাঁরা। ঠিকানা নিয়ে পৌঁছে যান রোগীর হাসপাতালে। রক্ত দিয়ে ফেরেন হাসিমুখে। মুন্সীগঞ্জ টঙ্গীবাড়ী উপজেলার একদল তরুণ এভাবেই স্বেচ্ছায় রক্ত দেন। আবার প্রয়োজনীয় রক্ত রোগী ও স্বজনদের ব্যবস্থা করে দেন। এই তরুণেরা স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংগঠন টঙ্গীবাড়ী ব্লাড ফাউন্ডেশন তৈরি করেছেন। স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে তাঁরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেন তৈরি করেছেন রক্তের বন্ধন।সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ শাহিন শেখ সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এলাকার অনেক অসুস্থ রোগীর রক্তের প্রয়োজন হয়। তাঁর বন্ধু শেখ শাহজাত অপু,রাকিব,আবু বক্কর,নাদিম,শান্ত,মুসরাত,নিরব, রাজিব স্যার,আসলাম,শামীম আরো ইত্যাদি কয়েক জন মিলে এ বিষয়ে কিছু করার উদ্যোগ নেন। পরে তাঁরা ২০২৪ সালের ১লা এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন টঙ্গীবাড়ি ব্লাড ফাউন্ডেশন । বর্তমানে ৬১৯ তরুণ রক্তদাতা সদস্য তালিকাভুক্ত রয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে ৬০ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি সংগঠনের কার্যক্রম টঙ্গীবাড়ী পরিচালনা করছে। রক্তদাতারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন।মোঃ শাহিন শেখ বলেন, ‘আমাদের সংগঠনটি গঠন করার আগে এলাকার কারও রক্তের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় রক্তের গ্রুপ জেনে ফেজবুকে শেয়ার দিতাম। তবুও মানুষ তেমন সাড়া দিত না। আর এখন টঙ্গীবাড়ি ব্লাড ফাউন্ডেশন সংগঠনটি মানুষের ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে।টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামের আনোয়ারা ২ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। প্রতি মাসে আনোয়ারা এক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। আনোয়ারা জন্য নিয়মিত রক্তদাতা জোগাড় করে দেয় টঙ্গীবাড়ী ব্লাড ফাউন্ডেশন । আনোয়ারা হোসেনের ছেলে আরিফ বলেন, আমার মায়ের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ার পর রক্ত জোগাড় করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে যোগাযোগ করেও রক্তের ব্যবস্থা হচ্ছিল না। পরে টঙ্গীবাড়ী ব্লাড ফাউন্ডেশন সংগঠনটির কথা জানতে পেরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এর পর থেকে আমাকে আর রক্তের চিন্তা করতে হয়নি। ব্লাড ব্যাংকের ভাইয়েরা আমার যে উপকার করছেন, তা আমি জীবনেও ভুলব না। বেসরকারি ক্লিনিকে সিজার রোগীকে রক্ত দিয়েছেন টঙ্গীবাড়ি ব্লাড ফাউন্ডেশন সদস্য সাজিদ আলম। তিনি দৈনিক সকালকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি ৯ বার রক্ত দিয়েছি। রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমার এক ব্যাগ রক্তে যদি কোনো মানুষের উপকার হয়, তাহলে ক্ষতি কী? রক্ত দেওয়ার পর রোগীর হাসিমাখা মুখ দেখে যে প্রশান্তি পেয়েছি, লাখ টাকা দিলেও ওই সুখ পেতাম না।টঙ্গীবাড়ি ব্লাড ফাউন্ডেশন নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাঁদের কাছে যে কেউ রক্ত চাইলে রোগীর ঠিকানা, হাসপাতাল বা ক্লিনিকের নাম জেনে নেন। এরপর ওই এলাকায় থাকা স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা করে দেন। ২০২৪ সাল থেকে রক্তদানের হিসাব তাঁরা লিখে রেখেছেন। সে হিসাবে তিন বছরে স্বেচ্ছায় ৬১৯ ব্যাগ রক্ত দান করেছেন সংগঠনের সদস্যরা। ৭ মাসে এরই মধ্যে ৬১৯ ব্যাগ রক্তদান সম্পন্ন হয়েছে।টঙ্গীবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা এক কর্মকর্তা বলেন, শরীরের লোহিত রক্তকণিকার আয়ুষ্কাল সর্বোচ্চ ১২০ দিন। তাই কেউ যদি রক্তদান না–ও করেন, তাহলে সেই রক্তকণিকা ১২০ দিন পর নষ্ট হয়ে শরীরের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশে যায়। তাই সুস্থ মানুষের চার মাস পরপর রক্তদানে কোনো ক্ষতি নেই। আর টঙ্গীবাড়ী তরুণদের রক্তদানের উদ্যোগ এখন জনপদে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই তরুণেরা রাতদিন, ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের পাশে যান, রক্ত দেন। তাঁরা সত্যিকারের মানবপ্রেমী।