হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ, কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কের পাশে হাজীগঞ্জ বাজারে মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। মসজিদটি সরাসরি ইট, বালু, রড, পাথর দিয়ে তৈরি হয়নি। প্রথমে একচালা খড়ের একটি ইবাদতখানা ছিল, পরে খড় ও গোলপাতা দিয়ে তৈরি দুই চালার মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
জানা যায়, ১১৭৫ থেকে ১২০০ বঙ্গাব্দের মধ্যে হজরত মকিমউদ্দিন (রহ.) নামের এক আল্লাহ ওয়ালা ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে হাজীগঞ্জে আগমন করেন। তিনি বর্তমান বড় মসজিদের মেহরাব সংলগ্ন স্থান, যেখানে একটু উঁচু ভূমি ছিল, সেখানে আস্তানা তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসতি স্থাপন করেন। তারই বংশের পুরুষ হজরত মনিরুদ্দীন হাজি ওরফে মনাই হাজির (রহ.) দৌহিত্র হাজি আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) ১৩২৫ থেকে ১৩৩০ বঙ্গাব্দের দিকে বড় মসজিদের মেহরাব বা তৎসংলগ্ন স্থানজুড়ে প্রথমে একচালা খড়ের ইবাদতখানা, পরে খড় ও গোলপাতা দিয়ে তৈরি দোচালা মসজিদ নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে এটি পাকা মসজিদে রূপ নেয়। ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ১৭ আশ্বিন আহমাদ আলী পাটওয়ারীর (রহ.) ইচ্ছায় মাওলানা আবুল ফারাহ জৈনপুরী (রহ.) পাকা মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদের ছাদ তৈরির জন্য তিনি কলকাতা গিয়ে জাহাজ ভাড়া করে লোহার ভিম ও মেঝের জন্য মর্মর পাথর আনেন। প্রথম পর্যায়ে ২ হাজার বর্গহাত আয়তনের বিশাল মসজিদের মেঝেতে মর্মর পাথর বসানো ঐতিহাসিক এ মসজিদটি তিন ভাগে নির্মিত হয়। মেহরাবসহ মসজিদের প্রথম অংশটি ৪ হাজার ৭৮৪ বর্গফুট। মাঝের অংশটি ১৩ হাজার ৬ বর্গফুট। আর বারান্দা বা সুউচ্চ মিনারসহ তৃতীয় অংশটি ১ হাজার ৬১৫ বর্গফুটসহ মসজিদটির মোট আয়তন ২৮ হাজার ৪০৫ বর্গফুট। ১৯৫৩ সালে মসজিদের পূর্ব সীমানার প্রধান দরজায় ১২২ ফুট উঁচু মিনার তৈরির কাজ শুরু হয় এবং তার পাশে গম্বুজ প্রস্তুত করা হয়। এই কাজ ১৯৫৭ সালে শেষ হয়। আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) ৩২ বছরে বিশাল মসজিদের মেহরাব থেকে মিনার পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ করেন। তার মৃত্যুর আগে তার তৃতীয় পুত্র মো. মনিরুজ্জামান পাটওয়ারীকে মোতাওয়াল্লি পদে নিযুক্ত করেন। মনিরুজ্জামান বাবার পরামর্শে মসজিদের তৃতীয় অংশে দোতলা নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। তার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক বছর পর আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) মৃত্যুবরণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে হাজী আহমাদ আলী পাটোয়ারী (রহ.) ওয়াকফকৃত সম্পত্তিতে গড়ে উঠেছে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স। প্রতিষ্ঠাতা মোতাওয়াল্লি হাজি আহমাদ আলী পাটওয়ারীর মৃত্যুর পর থেকে তার বংশধররাই এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তৃতীয় ছেলে মো. মনিরুজ্জামান পাটওয়ারীর মৃত্যুর পর মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব নেন বড় ছেলে হাজি মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী। বর্তমানে ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারীর ছেলে জনাব প্রিন্স শাকিল সাহেব, মোতাওয়াল্লির দায়িত্বে আছেন। মসজিদ পরিচালনায় সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আছেন ৯ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি। মসজিদ তৈরি করতে প্রায় ৭ বছর সময় লেগে যায়। ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের ১০ অগ্রহায়ণ নবনির্মিত মসজিদ উদ্বোধন করা হয়,
এবং এই মসজিদে দেশ এবং বিদেশের অসংখ্য রাজনিতীবিদ ও বিজ্ঞ আলেম ওলামাগন আগমন করেন । বিশেষ করে শেরে বাংলা একে ফজলুলহক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ বরেন্য ব্যক্তিবর্গ সহ আরো অনেকেই আগমন করেছেন।