পিকনিকের আনন্দে সবাই মাতোয়ারা।গন্তব্যের প্রায় নিকটেই চলে এসেছে গাড়ি। হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই বিআরটিসি দোতলা বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়ে আগুনে ঝলসে গেল তাজা কয়েকটি প্রাণ। এসময় রাস্তার পাশে বসবাসকারী মানুষেরা আগুন আগুন শব্দে বাড়ি থেকে রাস্তার পাশে দৌড়ে আসেন।তাদের চোখের সামনেই আগুনে মুহুর্তেই কয়েকজনের শরীর জ্বলসে গেলো । এসময় স্থানীয়দের সহযোগীতায় তাড়াহুড়ো করে কয়েকজনকে উদ্ধার করে সিএনজি অটোরিকশা যোগে হাসপাতালে পাঠানো হয়। একজন শিক্ষার্থীর শরীরের বেশিভাগ অংশ পুড়ে গেছে। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করি। এরপর বাসে উঠে দেখি একজন শিক্ষার্থীর নিথরদেহ পড়ে রয়েছে বাসের ফাঁকা জায়গায়। কয়েকজন মিলে আগুনে পুড়া মরদেহ নিচে নামায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিকবাহী বাসে বিদ্যাুয়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা এমন ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন গণমাধ্যম কর্মীদের।প্রত্যক্ষদর্শী এবং উদ্ধারকারী শামীম জানান,আমি বাচ্চা নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম এসময় পিকনিকের বাস যাচ্ছিল। এসময় ৫ টি বাস চলে যাওয়ার পর শেষের বাসটি বাম দিকে চাপিয়ে দেওয়ার কারণে বাসের ছাদের সাথে বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শ হয়।এসময় বাসটি বিদ্যুতায়িত হয়ে যায় আর যেই স্পর্শ করছে সেই ঝলসে যাচ্ছে। এসময় তাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে আমি লোকজন নিয়ে দৌড়ে তাদের উদ্ধার করতে আসি। একজনকে দেখি বাস এবং দেয়ালের মাঝখানে পড়ে তার শরীরে আগুন জ্বলছে এবং আরো দুই ছাত্র বাসের সাথে বিদ্যুতায়িত অবস্থায় আছে এসময় আমি একজনকে সজিনার ডাল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে আলাদা করি। বাসে যারা ছিলো তারা লাফালাফি করছে। পরে আমি বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দেয় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করার জন্য। প্রত্যক্ষদর্শী এবং উদ্ধারকারী জাকির হোসেন বলেন, সকালে বাড়ির বারান্দায় বসে ছিলাম। হঠাৎ করে আগুন আগুন শব্দে ডাক চিৎকার হচ্ছে। এরপর দৌড়ে বাহিরে বের হয়ে দেখি বাসে আগুন জ্বলছে। বাস থেকে হুড়োহুড়ি করে কয়েকজন নামছে। বাঁচাও বাঁচাও করে ডাক চিৎকার করছে। এরপর আমরা উদ্ধারে নেমে পড়ি। কয়েকজনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় গুরুতর আহত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয় অটোরিকশা সিএনজি যোগে। এরপর পল্লী বিদুৎ অফিসে ফোন করার পর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করলে বাসে উঠে দেখি একজনের মরদেহ পড়ে রয়েছে। কয়েকজন মিলে আগুনে ঝলসানো মরদেহ নিচে নামায়।স্থানীয় কামাল হোসেন বলেন, এমন ছোট্ট সংযোগ সড়কে এতগুলো ডাবল ডেক বিআরটিসির বাসে কি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পিকনিকে নিয়ে আসলো।আর কেমন করেই পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দুতলা বাস নিয়ে আসার কথা বললো, অথচ সড়কের সামান্য উপরে বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। সেই সংযোগ তারে ছোট পরিবহন চলাচল যেখানে ঝুঁকি। সেই সড়ক ধরে কি করে বিআরটিসি দোতলা বাস চলাচল করে। আজ কতৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা হয়েছে।গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কালিয়াকৈর সার্কেল আফজাল হোসেন বলেন, বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিকবাহী একটি বাস বিদ্যুতিক সংযোগ তারের সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি আইইউটি পিকনিকবাহী বাসে বৈদ্যুতিক সংযোগ তারের সঙ্গে অগ্নিসংযোগে মোস্তাকিম রহমান মাহিম, মোজাম্মেল হোসেন ও জুবায়ের রহমান সাকিব নামে তিন শিক্ষার্থী মারা যায়। এ ঘটনায় আরো ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।