কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অনুমোদনহীন রেন্ট বাইক । এই রেন্ট বাইক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়তই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তবে বড় দুর্ঘটনাগুলোই আলোচনায় আসছে, ছোটখাটো দুর্ঘটনা, এমনকি হতাহতের ঘটনা অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে।
এই যানগুলোর বেপরোয়া চলাচল, অদক্ষ চালক, যেখানে-সেখানে ইউটার্ন নেওয়া কারণে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও । বাইক গুলো সড়কে চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসন বা পৌরসভা থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে এই অবৈধ কারবার। আবার অনেক মাদক কারবারি কালো টাকা সাদা করতে এই ব্যবসাকে কাজে লাগিয়েছে।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে মেরিন ড্রাইভ সড়কের কচ্চপিয়া এলাকায় বাইক দুর্ঘটনায় ফারহানা আফরিন শিফা (২০) এক নারী নিহত হয়েছে। এই এঘটনায় শহিদুল আমিন তানিব নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে। এ ছাড়া গত এক মাসে এই রেন্ট বাইক দুর্ঘটনায় কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভে কমপক্ষে পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
তবে এসব দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে এল সাপ!
শহরের কলাতলী ডলফিন মোড়, বেইলি মোড়, সুগন্ধা পয়েন্টে প্রায় ৫ শতাধিক বাইক আছে। এর মধ্যে কিছু গাড়ির কাগজ রয়েছে। আবার একই গাড়ির কাগজ দিয়ে চলছে একাধিক গাড়ি। বাইক ভাড়া দেওয়ার সময় একটি ফরমের মাধ্যমে কিছু তথ্য নেওয়া হলেও চালক অভিজ্ঞ ও বাইক চালাতে পারে কিনা সেটাও যাচাই-বাছাই করা হয় না। অভিযোগ আছে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে আসা গাড়ি পুলিশকে ম্যানেজ করে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এই গাড়ি গুলো মেরিন ড্রাইভ সড়কে চলাচল করতে ৪টি পয়েন্টে দিতে হয় মাসিক ২ হাজার টাকা করে চাঁদা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কলাতলী, ডলফিন মোড়, বেইলি মোড়, সুগন্ধা পয়েন্টে সারিবদ্ধ ভাবে নামি-দামি বাইক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য পর্যটক ও স্থানীয়দের ভাড়া দিবে। ঘণ্টায় ৩শ টাকা করে এই বাইক ভাড়া দেওয়া হয়।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়,এসব অবৈধ রেন্ট বাইক ব্যবসার সাথে জড়িতরা হলেন, কলাতলী এলাকার এলাকার শামশু আলমের ছেলে রাসেল ওরফে ইয়াবা রাসেল,ঝিরঝিড়ি পাড়া এলাকার বাসিন্দা লোকমানের পুত্র বাপ্পি, মাধ্যম কলাতলী এলাকার লালু মিস্ত্রির ছেলে জামাল, বড়ছড়া এলাকার ফাহিম, আবু শামার ছেলে আবু তাহের, জহির সওদাগরের ছেলে শফিউল আলম, মাধ্যম কলাতলী এলাকার আবু কালাম পেঠানের ছেলে কাসফিন, আদর্শগ্রাম এলাকার ইরফান ও ঝিরঝিরি পাড়া এলাকার ফরিদুল আলমের ছেলে জাকির, মধ্যম কলাতলীর হাসান আলী ফকিরের ছেলে ভুট্টো।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, “শহরের মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ আর ট্রাফিক বক্স দেখা যায়, যেখানে অবৈধ পরিবহণ গুলো ধরার চেয়ে মোটরসাইকেল আটক আর জরিমানা করার দিক দিয়ে শীর্ষে থাকে। কিন্তু কলাতলীতে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফুটপাতে পার্কিং করে সারি সারি করে রাখা হয় রেন্ট এ কারের নামে মোটরসাইকেল। যেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়।
অথচ এসব মোটরসাইকেল ৯৯% অবৈধ কাগজপত্র বিহীন, এসব মোটরসাইকেল কীভাবে কোন উপায়ে চলে ভাড়া দেওয়া হয় তা সকলে জানে বুঝে।
এসব মোটরসাইকেল এখন মেরিন ড্রাইভ রোড়ের আতঙ্ক। যার কারণে ঘটছে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা, হারাচ্ছে প্রাণ। আমি মনে করি জেলা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশের আরো আন্তরিকতার সাথে এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
অভিযুক্ত রেন্ট বাইক ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ট্রাফিক পুলিশ ও হিমছড়ি পুলিশ ফাড়িকে ম্যানেজ করে তারা এসব ব্যবসা করছে।
রাহাত (ছদ্মনাম) বলেন, “আমরা মান্থলি (মাসিক চাঁদা) দিয়ে এই গাড়িগুলো চালায়। পুলিশ ধরলে টোকেন দেখালে ছেড়ে দেয়। ”
সচেতন মহলের দাবি এসব বাইক নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রাণহানি বাড়বে।