যশোরকে পর্যটন জেলা করার প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম। তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছেন খোদ পর্যটন উপদেষ্টাকেই। তার এই প্রস্তাব ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন উপদেষ্টা এএফ আরিফ হাসান। সেই কথা-ই জানিয়েছেন উপদেষ্টা।পর্যটন জেলা করার বিষয়ে উপদেষ্টা জেলা প্রশাসককে উদ্ধৃত করে বলেন, যশোরে ব্যাপকভাবে ফুল চাষ হয়। সোমবার তিনি সচক্ষে ফুল চাষ দেখেছেন। ফুল চাষকে পর্যটনের আওতায় আনা যায় বলে উল্লেখ করেছেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক যশোরকে পর্যটনের আওতায় নিতে বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া শেয়ার করেছেন। তাছাড়া, যশোর ভৌগলিকভাবে খুলনা বিভাগের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। যশোর থেকে রাজধানী ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ। এখানে বিমানবন্দর রয়েছে।সোমবার যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যশোরে আসতে আগ্রহী হবে বলে অনেকেই মনে করেন। এখন শুধু উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মন্তব্য তাদের।মতবিনিময় সভায় বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন এবং ভূমি উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ আরও বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে স্বৈরাচারী সরকার লুটপাটের জন্য ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছিল। যে যার মতো লুটপাট করেছে। যে কারণে বর্তমানের এই মুদ্রাস্ফীতি। বর্তমান সরকার এই মুদ্রাস্ফীতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি কাটিয়ে উঠতে পারলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানা সম্ভব হবে।সরকারি কর্মকর্তা, সুধিজন, ছাত্র প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।হাসান আরিফ বলেন, সংস্কার রাতারাতি কোনো ব্যাপার না। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামীতে নির্বাচিত সরকারকে এটি এগিয়ে নিতে হবে।তিনি বলেন, এক হাজারের বেশি শহীদের জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশবাসীর অনেক প্রত্যাশা। সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরও এই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে।উপদেষ্টা বলেন, যশোরকে পর্যটন জেলা করার জন্য জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম তাকে অনেক আইডিয়া দিয়েছেন। তার আইডিয়াগুলো যাচাই করে উদ্যোগ নেয়া হবে। এখানকার ফুল চাষ পর্যটনের আওতাভুক্ত হতে পারে। ফুল চাষকে সেইভাবে গড়ে তোলা গেলে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসবে এখানে।তিনি বলেন, ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতিমুক্ত করতে তিন বছর ধরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একইসাথে ভূমির সব কার্যক্রম অটোমেটেড করা হচ্ছে দুর্নীতি রোধ করার জন্য।জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, জেলা শুরা সদস্য অ্যাড. গাজী এনামুল হক, জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মিয়া আব্দুল হালিম, প্রেস ক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, সাংবাদিক নুর ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
উন্মুক্ত বক্তৃতায় জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় হজে যেতে বাংলাদেশে বিমান ভাড়া বেশি। এটি কমানো হলে অনেকের পক্ষে হজ করা সহজ হবে।জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারের কাছে দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা। যা পূরণ হচ্ছে না। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে পুলিশি কর্মকান্ড খুবই হতাশাজনক। এখনই পুলিশকে সক্রিয় করতে হবে। ছাত্র নেতৃবৃন্দকে দায়িত্বশীল হতে হবে। তাদের গন্ডি কতটুকু, তাদের কী করা উচিত অনুচিত সেটি অনুধাবন করতে হবে।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, এখনো পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। দুর্নীতিমুক্ত করা যায়নি সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলো।জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য অ্যাড. গাজী এনামুল হক বলেন, এসএ পর্চার ভোগান্তি কমছে না। জটিলতা বাড়ছে অর্পিত সম্পত্তি নিয়েও। তিনি ভূমি সেবায় গতি বাড়ানোর দাবি জানান।মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা তার আওতাধীন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের বিষয় সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেন।