রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. হাফিজুর রহমান কর্তৃক শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন (এসআরএ)।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে সকাল সাড়ে ১০টায় এ মানববন্ধন করেন তারা।
এ সময় বিভিন্ন প্লেকার্ড ও স্লোগান দিতে শোনা শিক্ষার্থীদের। “বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ইভটিজারের ঠাই নাই”, “বয়কট হাফিজ”, ” হিজাব আমার অধিকার”, ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ চলবে না- চলবে না” ইত্যাদি।
এসময়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে হিন্দু-মুসলিম-বোদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান সকলের ধর্মীয় ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে যা সংবিধান স্বীকৃত। এমন একটি দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়ন ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বর্তমান সরকার নারীদের অধিকারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন সেখানে ড. হাফিজুরের মতো কুলাঙ্গার রাতের বেলা শিক্ষার্থীদের কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে, ক্লাসরুমে হিজাব খুলতে বাধ্য করে, পিতার পেশা নিয়ে কটূক্তি করে এমনি শিক্ষার্থীদের টুকাই বলে।
এসময় আরও বলেন এমন একজন লম্পটকে তারা ক্লাসরুমে দেখতে চায় না। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং সকল প্রকার অ্যাকাডেমিক কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। তারা হুশিয়ারি করেন যদি কার্যকারী পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
সংগঠনের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে একজন নাগরিক আরেকজন নাগরিকের কোন কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তার সেই অধিকার নেই৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশ বিদেশে উজ্জ্বল করেছেন, সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু হাফিজুর রহমানের মতো শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়কে লাঞ্ছিত, অপমানিত করেছেন। তিনি ক্লাসে জোরপূর্বক মেয়েদের হিজাব খুলিয়েছেন৷ এটি যৌন নিপীড়ন, যৌন অত্যাচার৷ আমি বলবো, এমন শিক্ষক আরও যারা আছেন, সাবধান হয়ে যান। এমন শিক্ষক আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা আগামী দুই দিনে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। শিক্ষককে এই ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হল।
নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুস সানিহা বলেন, আমি একজন ভুক্তভোগী৷ আমি ক্লাসে সবসময় হিজাব পড়ে আসি৷ আমার ভাবতে খারাপ লাগে। আমার শিক্ষক এই সম্মানিত পোশাককে হেয় করেছেন। একই সাথে তিনি সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছেন। সংবিধানে আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা লঙ্ঘন করেছেন। আমি তার শাস্তি দাবি করছি।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়েছে শিক্ষকরা পিতৃতুল্য। ফলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের থেকে পিতার মতোই আচরণ প্রত্যাশা করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো একজন শিক্ষককে যখন নিয়োগ দেওয়া হয় তখন তার রেজাল্ট তার লবিং তার রাজনৈতিক ক্ষমতা এগুলোকে মূল্যায়ন করা হয় তার মানবিক গুণাবলি আদর্শিক চরিত্রগুলোকে নিয়োগের শর্তাবলির মধ্যে নিয়ে আসা হয় না। আমাদের এই সিস্টেমের মধ্যে নৈতিক ও আদর্শের জায়গাটাকে মূল্যায়ন না করার কারণে আজকে এই হাফিজরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়। পরবর্তীতে তাদেরকেই আমরা একজন ইফটিজার, সেক্সুয়াল হ্যারেজম্যাটর শিক্ষক হিসেবে দেখি। আমরা চাই অবিলম্বে এই হাফিজুর রহমানকে সমস্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দিতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে।