রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বেড়েই চলেছে পানিবাহিত রোগ জন্ডিস তথা হেপাটাইটিস এ ভাইরাস রোগের প্রকোপ। গত ১৭ দিনে ১৩১ জন শিক্ষার্থী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা।শনিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় এই তথ্যটি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. মো. লোমান মঞ্জুর (অপু)।
রাবির মেডিকেল সেন্টারের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে গত এক সপ্তাহে ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা করালে হেপাটাইটিস এ অর্থাৎ জন্ডিস ধরা পড়ে ৫৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে। এদিকে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১৭ দিনে ৩১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সংখ্যাটটি বেড়ে ১৩১’এ দাঁড়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল, একাডেমিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে সাবমারসিবল পাম্পের সংখ্যা খুবই কম। এদিকে টিউবওয়েল ও মোটরের পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এ রোগের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান মেডিকেল সেন্টারারের চিকিৎসকেরা।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন এবং একই পানি দিয়ে একাধিক প্লেট পরিস্কার, একটি গ্লাস দিয়ে অনেকেই পানি পান করায় ছড়াচ্ছে এসব রোগ। এছাড়াও হোটেলগুলোর রান্নাবান্নার কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করা হচ্ছে না। ট্যাপকল বা টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে রান্নার কাজ করছেন দোকানিরা এবং একই পানি পান করাচ্ছেন শিক্ষার্থীদেরকেও। ফলে জন্ডিসের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল এবং একাডেমিক ভবনগুলোতে যেন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেলগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি দোকানগুলোতে অভিযান চালাতে দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
নাট্যকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী তাহারাত বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ খাবার তৈরী হচ্ছে। একটি বোতল দিয়ে দশজন মানুষ পানি খায়। এদিকে প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। হলের টিউবওয়েলগুলোতে দুষিত পানি বের হয়। সাবমারসিবলের পানিও ঠিকমতো পাইনা আমরা। যার ফলে এ পানি বাহিত রোগ ছড়াচ্ছে।
জন্ডিস পরীক্ষা করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন চিত্ত নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, দুইদিন যাবত মাথা ব্যথা এবং জ্বরের মাত্রাও বেশি। আজ পরীক্ষা করাতে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে এসেছি। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হয়েছি যার ফলে রাজশাহী পানি ও খাবারের সাথে পেরে উঠছি না। আমি আজ পরীক্ষা করেছি। হয়তো আমারও জন্ডিস ধরা পড়বে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান চিকিৎসক ডা. লোমান মঞ্জুর (অপু) বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্ডিস তথা হেপাটাইটিস এ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে আবাসিক হলগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ প্রকোপ দেখা দিলেও ইদানীং ক্যাম্পাসে বাইরে মেসে বা ভাড়া বাসায় থাকেন এমন শিক্ষার্থীরা এখন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে শিক্ষার্থীদের আগে সচেতন হতে হবে। তাদের সাবমারসিবল পাম্পের পানি খেতে হবে। ক্যাম্পাসে হোটেল ও ক্যান্টিন মালিকদের উচিত বিশুদ্ধ টিউবওয়েল বা সাবমারসিবলের পানি দিয়ে রান্নার কাজ করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। ফুটপাতের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে বলে জানান তিনি’
এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, যেসব শিক্ষার্থীরা হলের বাহিরে থাকেন তাদের বেশি সচেতন হতে হবে। কারণ বাইরের শিক্ষার্থীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমরা জন্ডিস প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। বোতলের মাধ্যমে সাবমারসিবল পাম্পের নিরাপদ পানি সংরক্ষণ করে শিক্ষার্থীদের খেতে হবে, এ জন্য প্রাধ্যক্ষ পরিষদকে সাবমারসিবল পাম্প চালু রাখার সময়সীমা বাড়াতে প্রশাসন থেকে নির্দেশনা প্রদান করেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন করার জন্য আমরা বিভাগে বিভাগে লিফলেট পাঠিয়েছি। আজকে শিক্ষার্থীদের সচেতনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকিং করা হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেলগুলোতে খাবারের গুণগত মান পরীক্ষা করতে আমরা আজ অভিযান চালাবো বলে জানান এ ছাত্র-উপদেষ্টা।