লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ৮ নং দক্ষিণ gcm. চর বংশী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ফাতেমার নিজ গৃহের একটি রুমে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ৬ জুলাই ( রবিবার) দুপুর অনুমান ২:৩০ মিনিটের সময় ভুক্তভোগী ঐ কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র ও স্বাক্ষীদের জবানবন্দি থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
অপরদিকে ভিকটিম পরিবার ও ভুক্তভোগী ঐ কিশোরী কেঁদে কেঁদে ধর্ষকের কঠোর বিচার দাবী করে গণমাধ্যমকে বলেন, “গত তিনমাস ধরে আমি মহিলা মেম্বার ফাতেমার ঘরে কাজের বুয়া হিসেবে কাজ করে আসছি। ঘটনার দিন ও সময় ঐ বাড়িতে কেউ না থাকায় সেই সুযোগে মেম্বার ফাতেমার বাসুরের ছেলে সজীব (১৯) পিতা: আব্দুল জলিল সর্দার আমাকে একা দেখে চুপি চুপি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে, আমি তখন মেম্বারের ঘরের উত্তর পাশের রুমের মেঝে মুছতে ছিলাম, হঠাৎই সজীব পিছন থেকে আমাকে ধরে জোরপূর্বক শারীরিক নির্যাতন করে। হাত -পা বেঁধে, পরনের কাপড় টেনে-হেঁচড়ে খুলে, মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। আমি পিরিয়ড অবস্থায় থাকায় শারীরিকভাবেও কিছুটা অসুস্থ ছিলাম হাতে-পায়ে ধরে বারবার অনুরোধ করেও শেষ রক্ষা হয়নি আমার। সজীব জানোয়ারের মতো খুবলে খুবলে আমার নিস্পাপ দেহকে ভোগ করে। একাধিকবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করা অবস্থায় ঘরে হঠাৎই প্রতিবেশী ইভা চলে আসায় সজীব আমাকে ছেড়ে দৌড়ে পালায়, আমি প্রাণে বেঁচে যাই। আমার মা নেই, আমাকে এখন কে বিয়ে করবে? আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো এখন? আমি এই নরপিশাচ ধর্ষকের কঠোর বিচার চাই। এমন বিচার দাবী করছি যা দেখে প্রত্যেক ধর্ষকের কলিজা কাঁপে, সাহস না হয় আমার মতো আর কোন মেয়ের সতীত্ব নষ্ট করার। আমি ওর কঠোর থেকে কঠোর বিচার দাবী করছি। ঘটনার পরপরই বিষয়টি আমি মহিলা মেম্বার ফাতেমাকে জানাই, ফাতেমা মেম্বার সবকিছু জেনে আমাকে সজীবের সঙ্গে বিয়ে দিবে বলে প্রথমে সান্ত্বনা দেন, কিন্তু আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে মেম্বার ও তার বাসুর পুত্র সজীব আমাকে এবং আমার পরিবার কে হুমকি ধামকি দিয়ে বলে আমরা একটা মামলা করলে ওরা আমাদের নামে মিথ্যা বানোয়াট পাঁচটা মামলা করবে। আমাদেরকে প্রাণে হত্যা করবে। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং সজীবের সঙ্গে মিথ্যা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে সঠিক সময়ে থানায় এসে মামলা করতে না দিয়ে আমাদেরকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ধর্ষককে বাঁচাতে ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু দেড়িতে হলেও সুযোগ পেয়ে থানায় এসে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এখন মামলা দায়ের করেছি।”
ভুক্তভোগী পরিবার আরও বলেন , “স্থানীয় মহিলাৃ মেম্বার ফাতেমা বেগম, যিনি ধর্ষক সজীবের আত্মীয় (ভাসুরের ছেলে), তিনি ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে বারবার চাপ দিচ্ছেন যেন বিষয়টি থানা বা মিডিয়াতে না যায়।”
এ ঘটনায় প্রতিবেশী ইভা বলেন, আমি মহিলা মেম্বার ফাতেমার কাছে একটা প্রয়োজনে গিয়ে ঘরে ঢুকে দেখি, সজীব ঐ কিশোরীকে ধর্ষণ করছে, কারো পরনে কিছু নেই। আমাকে দেখেই সজীব ভুক্তভোগী কে ছেড়ে দিয়ে আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে কারো কাছে এ ঘটনা না জানাতে, কিন্তু আমি তখন বলছি কখনো না তুই একটা অসহায় মেয়ের সতীত্ব নষ্ট করছোস, তোকে তো এর শাস্তি পেতেই হবে, আমি সবাইকে বলে দিবো। তখন সজীব আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ঘর থেকে দৌড়ে পালায়। পরে আমি ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে বাড়িতে এসে নিজের পরিবারের কাছে বিষয়টি জানাই। আমি এই নরপিশাচ ধর্ষকের কঠোর বিচার চাই। “
এছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে কাজল ও মজিবর সর্দারও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অভিযুক্তের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মহিলা মেম্বার ফাতেমা গণমাধ্যমের কাছে ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ” ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট, ভুক্তভোগী কিশোরী কখনোই আমার কাজের বুয়া ছিলনা, ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না, ভুক্তভোগী মেয়েটি আমার মেয়ের সঙ্গে আমার ঘরে আসছিল। সজীব ওর জামা ধরে টানাহেঁচড়া করেছে এতটুকু শুনেছি, ধর্ষণ করছে এমন কথা মেয়ে তখন বলেনি। ভুক্তভোগীর পরিবার আমাকে ফাঁসাচ্ছে, আমার নামে যদি একটা মামলা করে তাহলে আমি ওদের নামে সাতটা মামলা করবো। দেখে নেবো ওদের কে। আপনারা গিয়ে আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তা লিখে যা করতে পারেন করেন। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। “
এখানেই ক্ষ্যান্ত নয় সরজমিনে স্থানীয়দের থেকে তথ্য সংগ্রহকালে মহিলা মেম্বার ফাতেমা উপস্থিত থেকে কাশেম বেপারীর ছেলে আব্দুর রহিম কে দিয়েও গণমাধ্যমের কাজ তথ্য সংগ্রহে একাধিকবার বাঁধা দিয়েছেন।
ঘটনা সত্যতার বিষয়ে জানতে ধর্ষক সজীবের বাড়িতে গিয়ে সজীব কে পাওয়া যায়নি। মহিলা মেম্বার ফাতেমা ও স্থানীয়রা জানান ঘটনার পরপরই সজীব এলাকা ছেড়ে পলাতক রয়েছে। সে এখন কোথায় আছে তা কারো জানা নেই।
এবিষয়ে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”