1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ০৭:১৯ অপরাহ্ন

রোগাক্রান্ত বার্মিজ গরুতে সয়লাব ঈদগাঁও বাজার, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

মোহাম্মদ সেলিম, প্রতিনিধি (ঈদগাঁও উপজেলা)
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে
আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ঈদগাঁও বাজার মায়ানমারের রোগাক্রান্ত ও চোরাই গরু পাচারের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রাত নামলেই ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা দিয়ে হরদম পাচার করা হয় মায়ানমার থেকে চোরাই পথে আনা শত শত গরু। এসব গরু ঈদগাঁও গরুর বাজারে তুলে বাজার ইজারার হাসিলের রশিদ দিয়ে বৈধকরন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে । রোগাক্রান্ত এসব গরুর কারনে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, রামু উপজেলার পাহাড়ী জনপদ ইদগড় ও পার্বত্য নাইক্ষংছড়ি উপজেলার মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে পাচার করে আনা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শত শত গরু মহিষ প্রতিরাতে ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভাদিতলা হয়ে কলেজ রোড ও অন্যান্য সড়ক-উপসড়ক দিয়ে বাজারে তোলা হচ্ছে ।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে গরুগুলো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী সীমান্তে নিয়ে আসে পাচারকারীরা। সেখান থেকে নরিচ বুনিয়া ও ব্যাঙ ঢেফা সংলগ্ন পাহাড়ী পথ দিয়ে ঈদগাঁও ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের কালির ছড়া ভুতিয়া পাড়া সংলগ্ন গহীন বনের বালুর গেইট এলাকায় মজুদ করা হয়।
এরপর রাত নামলেই বিভিন্ন পাহাড়ী পথ দিয়ে গরুর পাল চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে পৌঁছে দেয় বেশ কয়েটি গ্রুপ। এরপর ঈদগাঁও বাজার হয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পাচার করা হয় এসব গরু।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক পরিচয়ধারী দুর্বৃত্ত ও এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে গঠিত একাধিক সিন্ডিকেট গরু পাচারে সক্রিয় রয়েছে।
এতে সরকার হারাচ্ছে মূল্যবান রাজস্ব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী বাইশারী ইউনিয়নের আলিক্ষ্যং ১নং মৌজা এলাকার সাথে মায়ানমারের যোগাযোগ সহজ। এসব এলাকা দুর্গম ও গহীন বনের ভিতরে হওয়ায় মায়ানমার থেকে গরু ও মাদক সহজেই দেশে প্রবেশ করছে।
সেখানে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গের মতো কাটা পাহাড়। মুলত সেই সুড়ঙ্গ কাটা পাহাড় দিয়েই মায়ানমার থেকে প্রবেশ করে গরু, মাদক ও অবৈধ সব পণ্য।
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিয়মিত টহল না থাকায় মায়ানমার থেকে সে দেশের বাসিন্দা আনোয়ার সাদেক ও রবি নামের দুই চোরাকারবারী দলের সদস্য প্রতিনিয়ত গরু পাচার সিন্ডিকেট গড়ে তুলে এদেশে গরু পাচার করে আসছে। তাদের হয়ে ঈদগাঁও ও বাইশারী এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সারাদেশে গরু পাচার করে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, মায়ানমারের অসুস্থ গরু পাচারকারী এ সিন্ডিকেটে বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষংছড়ি, কক্সবাজারের খরুলিয়া, রামু, চকরিয়া ও ঈদগাঁও উপজেলার কয়েকজন জড়িত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব প্রভাবশালীরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আনা গরু গুলো তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে কাজে লাগাচ্ছে বাইশারী, ঈদগড়, ঈদগাঁও, রশিদ নগর ,গর্জনিয়ার অর্ধ শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের। এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের রয়েছে আলাদা আলাদা বাহিনী। এরা স্থানভেদে গরু পৌঁছে দিচ্ছে প্রতি গরু ৫শ, ১ হাজার, দুই হাজার টাকার চুক্তির মাধ্যমে।
সড়কে বিজিবির টহল থাকায় পাহাড়ি জনপদকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা এসব গরু পাচার সিন্ডিকেটের সদস্য ও অস্ত্রধারীরা এতই শক্তিশালী কেউ তাদের বাধা দেওয়ার সাহস করে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে যেসব সড়ক দিয়ে ঈদগাঁও বাজারে গরু পাচার হয় সেগুলো হলো রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের হামির পাড়া, নাদেরুজ্জামান হাই স্কলের পাশের সড়ক, ঈদগাঁও সদর ইউনিয়নের কালির ছড়া ভুতিয়া পাড়া সড়ক, কালির ছড়া শিয়া পাড়া সড়ক, চান্দের ঘোনা কাটা পাহাড়, ভাদিতলা শিয়া পাড়া, দরগাহ পাড়, ঈদগাঁও ঈদগড় সড়ক, ইসলামাবাদ গজালিয়া সড়ক, ইসলামপুর ভিলেজার পাড়া সড়ক, জুম নগর সড়ক, খুটাখালী কালা পাড়া উল্লেখযোগ্য।
এসব সড়ক দিয়ে গরু পাচার করতে পাহাড়ি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি কাজে লাগানো হয়েছে স্থানীয় ছিঁচকে চোর-ডাকাত ও  সন্ত্রাসীদের। সিন্ডিকেটের সদস্যের নির্দেশ মতে তারা এসব গরু টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দিচ্ছে তাদের গন্তব্যস্থলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মাস দেড়েক ধরে রাত নামলেই শুরু হয় গরু পাচার। ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভাদিতলা এলাকার পাহাড়ী পথ দিয়ে শত শত গরু এনে কলেজ রোড দিয়ে মহাসড়কে তোলা হয়। এরপর কলেজ গেইট থেকে হাঁটিয়ে ১০০ গজ দুরের গরু বাজারে তোলা হয় এসব গরু। আতঃপর বাজার ইজারার হাসিলের রশিদ দিয়ে বৈধকরন করে দেশের বিভিন্ন গন্তব্য পৌঁছে যায় মায়ানমার থেকে পাচার করে আনা এসব গরু।
সূত্রে প্রকাশ, গরু পাচার সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছে ঈদগাঁও বাজারের ইজারাদার৷ আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে বাজারের রশিদ প্রদান করে করে প্রতিরাতে পাচারকৃত শত শত গরু “বৈধ” প্রমাণ করছে বাজারের অসাধু ইজারাদার৷
গত প্রায় দুই মাস ধরে প্রতিদিন মায়ানমার থেকে পাচারকরে আনা শত শত গরু ঈদগাঁও গরু বাজারের রশিদ প্রদান করে দেশের বিভিন্ন স্হানে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে ঈদগাঁও বাজার ইজারাদারের বিরুদ্ধে । ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়ক দিয়ে গরু পাচারের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
কয়েকদিন আগে সরেজমিন গিয়ে ঈদগাঁও বাজারের ইজারাদার রহিম উদ্দীনের কাছ থেকে এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জনৈক সাংবাদিকের সাথে মোবাইলে কথা বলিয়ে দেন  ও এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।
ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি ) মোঃ মছিউর রহমান এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিমল চাকমা ফোন রিসিভ না করায় উপরোক্ত ব্যাপারে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজারস্হ ৩৪ বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল খায়রুল আলম বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com