স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশের প্রতিটি পৌরশহর হবে স্মার্ট তারই ধারাবাহিকতায় লক্ষীপুর পৌর শহরকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চলছে উন্নয়ন কাজ। সেই উন্নয়ন কাজকে ব্যর্থ করতে একটি শ্রেণি তাদের দুর্নীতি অনিয়মকে এই উন্নয়ন কাজে অংশীদারিত্ব করছে ।
লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য দীর্ঘদিন থেকে কাজ চলছে। রাস্তা প্রশস্ত করতে দু পাশের জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তারপর থেকে পরিকল্পিতভাবে শুরু হয় রাস্তা প্রশস্ত করনের কাজ। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু হলেও অপরিকল্পিত ভাবে কাজ করছে ঠিকাদার। রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং ড্রেন নির্মাণে অর্থ লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। প্রথম ধাপে রাস্তার দুপাশের মাপে বৈষম্য রেখে সীমানা নির্ধারণ করেছেন খায়ের আমিন। যেখানে সড়কটি হওয়ার কথা সমান মাপের সেখানে আঁকাবাঁকা সীমানা নির্ধারণ করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে খায়ের আমিনের বিরুদ্ধে। এরপর শুরু হয় প্রশস্ত করণের কাজ। কিন্তু সিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ড্রেন নির্মাণেও ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। সিডিউল অনুযায়ী দুই পাশের সমান জায়গা না হওয়ার কারণে অনিয়মের সুযোগটা বেশি পেয়েছেন ঠিকাদার। কিন্তু প্রশ্ন এ দায় কার? পুরানো কার্পেটিং মিশিয়ে ছয় ইঞ্চি মেকাডামের পরিবর্তে করা হচ্ছে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি মেকাডাম।এছাড়াও প্রাইমকোট ছাড়া রাতের অন্ধকারে করা হচ্ছে কার্পেটিং এর কাজ। কর্পেটিংয়ে নির্ধারিত সাইজের পাথর ব্যবহার না করে নিজেদের মন মত পাথর ব্যবহার করারও অভিযোগ উঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে । এখন প্রশ্ন এত বড় প্রকল্পের কাজে এমন অনিয়মে শহরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সড়ক কর্তৃপক্ষরা কি করছেন ? কেনই বা এত দ্রুত দায়সারা কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকাদার? পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসের সামনে দিয়ে এমন দায়সারা রাস্তার কাজ চলতে থাকায় হতাস স্থানীয়রা। পৌর শহরের রামগতি বাস স্ট্যান্ড থেকে উত্তর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত হাঁটলে দেখা যায় অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হচ্ছে এত বড় প্রকল্পে। আবার অনেক জায়গায় দেখা যায় রাস্তার পাশের অনেক স্থাপনাও সরানো হয়নি।
একটা সময় এমন অনিয়মে ক্ষুব্ধ হয়ে গেছে স্থানীয়রা। গত ৩০ মে শুক্রবার কার্পেটিং করার সময় স্থানীয়দের চাপের মুখে পড়েন ঠিকাদার। প্রতিবাদের ফেটে উঠেন এলাকাবাসী। তবে বিষয়টি জানার পর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু রাস্তার কাজ পরিদর্শন করেন। এবং তিনি সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার জন্য সতর্ক করেন তাদের। বিষয়টি নিয়ে কোন ধরনের উত্তর দিতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক বিভাগ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত তারেক নামে একজন অনিয়ম অস্বীকার করে বলেন, আমাদের মেশিনপত্র চলে গেছে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি । এবং অচিরেই চিঠি দিয়ে অফিসকে অবগত করবেন বলেও জানান তিনি। এদিকে কঠিন দুর্ভোগে আছে সাধারণ মানুষ। রাস্তার কাজ চলমান থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় পথচারীকে। বিশেষ করে হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় হাসপাতাল গেট সংলগ্ন এই স্থানটিতে যানজট লেগেই থাকে।
ওদিকে রাস্তা ধুলবালির কারণে পথচারীসহ স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরা বায়ু দূষণের কবলে পড়ে বিভিন্ন রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১৯ সালে লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজের অনুমোদন হয় কিন্তু ধাপে ধাপে সময় বৃদ্ধি করেও শেষ করতে পারেনি কাজটি। অথচ চলতি জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের মেয়াদ কম থাকার কারণে ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে দায়সারা কাজ করে যাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, এমন দায়সারা কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তারা । ইতিমধ্যে এই রাস্তার কাজটির অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম facebook এবং বিভিন্ন পত্রিকায় টেলিভিশনে লেখালেখি হয়। এমন পরিস্থিতিতে শিডিউল অনুযায়ী সঠিকভাবে রাস্তার কাজটি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান স্থানীয়রা। তবে এ সকল অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম কে বারবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।