লালমনিরহাটের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও ডোবে বর্ষার শুরুতে সাধারণত দেশি মাছের প্রজনন ও ডিমদানের মৌসুম। তবে এ বছর দেখা যাচ্ছে, সেই সময়ে দেশি মাছের ধরা পড়ার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। জেলার ৫টি উপজেলায় (সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে) দেশি মাছের ধরা পড়ার ঘটনা দুর্দান্তভাবে কমে গিয়েছে। রংপুর অঞ্চলে দেশি মাছের প্রাপ্যতা মাত্র ১২–১৫% নেমে এসেছে, ২০ বছর আগের তুলনায় প্রায় ৭৬–৮৮% প্রজাতি হারিয়ে গেছে। লালমনিরহাট জেলা মৎস্য সপ্রসারণ কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, বর্তমানে যে ৩০-৩৫ জাতের দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তার পরিমাণ অনেক কম। তুলনা করা হলে আগের চেয়ে মাত্র ১২-১৫ শতাংশ দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অধিকাংশ জলাশয় পানিশূন্য হয়ে পড়ায় মাছের বিচরণ ও বৃদ্ধি থেমে যাচ্ছে। এছাড়া কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় দূষিত হচ্ছে জলাশয়ের পানি। এতে দেশি মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া চায়না দুয়ারি জাল, মরণ জাল, কারেন্ট জাল ও রিং জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন হচ্ছে। মাছের বিড্রিং গ্রাউন্ডগুলো নষ্ট করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণ করায় মাছের বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের দেশি জাতের মাছচাষ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। হাইব্রিড মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা সেদিকে ঝুঁকছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এখন যেসব দেশি জাতের মাছ দেখা যাচ্ছে, এক যুগ পরে এগুলোও হয়তো দেখা যাবে না।
সুশীল সমাজের দাবি, প্রজনন মৌসুমে দেশি মাছ ধরা বন্ধে আইন প্রয়োগ, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ ও সচেতনতার লক্ষ্যে প্রশাসন ও স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ এখন সময়োপযোগী।