১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। প্রতিবছর দিবসটি পালন করে আসছে নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কর্তৃপক্ষরা। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার দিনব্যাপী বদলগাছী উপজেলার বৌদ্ধ বিহারে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘শিক্ষা ও গবেষণায় জাদুঘর’। আর দিবসটির মূল উদ্দেশ্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, গবেষক ও পর্যটকদের গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজস্ব ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে সহায়তা করা।
উত্তরবঙ্গের বৃহৎ প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট ও বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত প্রত্নস্থল জেলার এই পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘর কর্তৃপক্ষ দিবসটি উপলক্ষে এদিন সকালে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এবং শোভাযাত্রা শেষে পাহাড়পুর বাজার সংলগ্ন আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয় এবং সোনামণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জাদুঘরের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান। পরে জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে দিবসটির গুরুত্ব সম্পর্কে এক সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে জাদুঘর প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন থানা, র্যাব, বিজিবি, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে দেশী পর্যটকসহ বিদেশী পর্যটকরাও প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনী উপভোগ করেছেন।
পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিম আরজু। তিনি বলেন, এবারে আমাদের একটি ব্যতিক্রমী নির্দেশনা ছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরা। পাশাপাশি দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনী। যেটা চলবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ কিরণ কুমার রায়, অন্যান্য পুলিশসদস্য, বৌদ্ধ বিহারে নিযুক্ত আনসার বাহীনির সদস্য। এছাড়া বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষার্থীসহ বিহারের সকল শ্রেণীর কর্মরতরা।
ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়ামসের আহ্বানে ১৯৭৭ সালে প্রথম বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস (আইসিওএম)। এর সদস্য হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ১৮০টি দেশের ২৮ হাজার জাদুঘর যুক্ত রয়েছে।
জানা গেছে, এ উপমহাদেশে জাদুঘরের ধারণাটি এসেছে ব্রিটিশদের মাধ্যমে। ভারতীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা এ অঞ্চলের জাতিতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, ভূ-তাত্ত্বিক এবং প্রাণী বিষয়ক নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস, যিনি এশিয়াটিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন— তিনি কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জমির ব্যবস্থা করেন। ১৮০৮ সালে সেখানে জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণ শেষ হয়। এ প্রক্রিয়ায় ১৮১৪ সালে উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটি মিউজিয়াম’-এর জন্ম ও প্রতিষ্ঠা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯১০ সালের এপ্রিলে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় শরৎকুমার রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। এটি নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৩ সালে। বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক জাদুঘর আছে। প্রতি জাদুঘরে এমন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে। এতে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তুগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয় এবং তা জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়।