শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হলো ৭০ বাড়ি কয়ক হাজার বিঘা জমি,আম বাগান,বাঁশ বাগান,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মসজিদও গোরস্তান। আরো প্রায় এক শো পরিবার ঝুকির মধ্যে আছে। অসহায় পরিবারগুলো আর্থিক সংকটের কারণে খোলা আকাশের নীচে অনাহারে –অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। সোমবার ও মঙ্গলবার সরজমিনে দূর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়নের ৭/৮ গ্রাম ঘুরে অসহায় পরিবার গুলোর সাথে কথা বলে ভয়াবহ চিত্র পাওযা গেছে। দূর্লভপুর ইউনিয়নের ঝাল পাড়া গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুল খালেক জানান গত ২০ দিনে আমাদের গ্রামে ১৪টি বাড়ি,একটি মসজিদ ও প্রায় চার শো বিঘা ফসলি জমি ও গত তিন বছরে প্রায় ৬০ টি বাড়ি ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এক হাজার বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। পন্ডিত পাড়ার তোহরুল ইসলাম জানান আমরা পাঁচ ভাইসহ মোট ১০টি পরিবার নদীর তীর ঘেষে খোলা আকাশের নীচে বাস করছি। ঘরগুলো কিছুটা দূরে সরিযে রেখেছি। কিন্তু কোন উপায় নেই কোথাও যাবার। তিনি আরো জানান এ বছরে শুধু পন্ডিত পাড়ার প্রায় ১৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। গত চার বছরে এ গ্রামে ৬০টি বাড়ি,প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি, একটি জামে মসজিদ সহ আম বাগান সহ সব কিছু বিলীন হয়ে গেছে। বাদশাহ পাড়া গ্রামের বাবুল উ্িদ্দন জানান এবার দিয়ে চারবার ভাঙ্গনের কবলে পড়লাম।
৩০বিঘা জমি ছিল, আম বাগান ছিল,গরু ছাগল ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি নি:স্ব। তিনি বলেন এ গত ২০দিনে বাদশাহ পাড়ার ১৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। তিনি আরো জানানা গত চার বছরে এ গ্রামে প্রায় ৩০০টি বাড়ি, দুইটা জামে মসজিদ,দুইটা প্রাইমারী স্কুল,দুইটি ওয়াক্তিয়া মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ৮০ বছরের মুরব্বী সোহবার হোসেন জানান,এবার দিযে পাঁচবার ভাঙ্গনের কবলে পড়লাম। আর পারি না। মনে হচ্ছে পদ্মা নদীর মাঝখানে গিয়ে ভেসে যাই। এদিকে ৯নং ওয়ার্ড কমিনিটি সেন্টারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সোহের রানা জানান, বর্তমানে আটটি প্রাইমারী স্কুল,দুটি হাইস্কুল, দুটি মাদ্রাসা, একটি গোরস্তান, কয়েকটি মসজিদ সহ দ্বোভাগী বাজার ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে। মাত্র চার শো মিটার দূরে নদীর অবস্থান।পাকা ইউনিয়নের শরিফুল ইসলাম জানান আমি ছয়বার পদ্মার ভাঙ্গনে পড়ে শেষে আটরশিয়া বাঁধের ওপর মাত্র ছয় শতক জমির অস্থায়ী ভাবে বাড়ি করে বাস করছি। লক্ষিপুর ঘাটে ছোট একটি পান সিগারেটে দোকান আছে,তাও আবার আর্থিক সংকটে ঠিকমত চালাতে পারিনা। একই গ্রামে মুন্টু বলেন গত বছল বাড়ি ভেঙ্গে নদী থেকে একটি দূরে খোলা আকাশের নী চে বাস করছি। বর্তমানে পাঁচফিট দূরে নদীর অবস্থান। জমাজমা সবকিছু নদী গর্ভে। লজ্জায় না পারছি ভিক্ষা করতে, না পাচ্ছি রোজগারে পথ। তবে প্রশাসন বলছেন ভিন্ন কথা।এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগন এখনো ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেননি। পাকা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান বর্তমানে ভাঙ্গন বন্ধ আছে। কোন তালিকা তৈরী ও ত্রান দেয়া হয়নি। দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আযম জানান দুই একদিনের মধ্যেই উপজেলা প্রশাসন সহ পরিদর্শনে যাবো এবং এ ব্যাপারে উদ্ধুর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করবো। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মিজানুর রহমান বলেন. এটি আমার জানা নেই । উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজাহার আলি বলেন নদী ভাঙ্গনে শিবগঞ্জে কেউ বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ হওযার সংবাদ নেই।।তবে এটি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আালী কাউসার জানান পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণের জন্য ১৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হয়েছে। বর্তমানে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এটি একনেকে অনুমোদন হলেই শিবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নের মাসুদপুর বিওপি হতে পাকা ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় পদ্মার বামতীর ১১.০১৫ কিলোমিটার ও ডানতীর ১০.৪৪০ কিলোমিটার সংরক্ষণ করে নদী ভাঙ্গন রোধ হবে। তিনি আরো বলেন এবারও প্রাায় ৬০/৭০টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং রঘুনাথপুর বিজিবি বিওপি সহ প্রায় শ খানেক বাড়ি হুমকীর মুখে আছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রান শাখার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান শিবগঞ্জে নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থের সংবাদ আমার কাছে নেই। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর এলাকায় ২৫০পরিবারের ১২শো মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উল্লেখ্য যে আইয়ুব বিশ^াস টোলা গ্রামের সাদিকুল ইসলাম, বাদশাহ পাড়ার মুকুল ইসলাম ,সাহেব আলি,সোহবুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান পাকা ও দূর্লভপুর ইউনিয়নের বয়োজৈষ্ঠরা জানান গত ২০১৩ সাল থেকে এপর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর আবাদী জমি, ১৫ হাজার বাড়ি,সরকারী ও বেসরকারী মিলে ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একট্ িবিদ্যুত কেন্দ্র, দুটি বিজিবি ক্যাম্প ,স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র,কয়েকটি গোরস্তান ও কয়েকটি হাট বাজার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।