মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সেপটিক ট্যাংক থেকে মোবাইল তুলতে গিয়ে বিষক্রিয়ায় একে একে ৪ তরুণের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার হরিণছড়া চা বাগানে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অপর একজনকে আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, রানা নায়েক নামে একজন রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে কাঁচা টয়লেটের ওপরে বসানো প্লাস্টিকের স্লাব দেবে যায়। এতে তিনি টয়লেটের নিচে গর্তে পড়ে যান। পরে তার বড় ভাই তাকে উদ্ধার করতে এলে তিনিও বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে নিচে আটকা পড়েন। এভাবে তাদের উদ্ধার করতে একে একে আরও দুজন ওই কাঁচা টয়লেটের গর্তে নামেন। কিন্তু কেউই বুঝতে পারেননি ভেতরে কী ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে ধাপে ধাপে সবাই অচেতন হয়ে পড়েন। ফলে এক পর্যায়ে সেখানেই ৪ জনের মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই ২০২৫) সকালে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রণয় কান্তি দাশ বলেন, ওদের একজনের মোবাইল টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে পড়ে গিয়েছিল।
এরপর ওই মোবাইল উদ্ধার করতে গিয়ে একে একে ৪ জন ট্যাংকে নামলে বিষক্রিয়ায় তারা মৃত্যুবরণ করে।
নিহতরা হলেন— রানা নায়ক (১৭), শ্রাবণ নায়েক (১৯), কৃষ্ণ রবিদাস (২০) এবং নিপেন ফুলমালি (২৭)। এরা সবাই শ্রীমঙ্গল হরিণছড়া চা বাগানের চা শ্রমিকের সন্তান। এ ঘটনায় রবি বুনার্জী (২০) নামে আহত একজনকে জরুরি চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সব্যসাচী পাল তমাল বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১টায় প্রথমে ৪টি ডেডবডি আমাদের হাসপাতালে আসে। প্রায় এক ঘণ্টা পর আহত একজন আসে। সেপটিক ট্যাংকে একে একে চারজন মারা যাওয়ার ঘটনাটি অস্বাভাবিক। এক রিঙের একটা সেপটিক ট্যাংকে এত টক্সিক গ্যাস কী করে জমলো এটা ঠিক ক্লিয়ার করে বুঝা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে, এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শুনেছি এ ঘটনাটা। পরে পুলিশ হরিণছড়া চা বাগানের গিয়ে ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ বলেন, হরিণছড়া বাগানের ৪ জন তরুণের মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক।
শুনেছি একজনের মোবাইল ফোন টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে পড়ে গেলে এটি উদ্ধার করতে গিয়ে একে একে রানা, শ্রাবণ, কৃষ্ণ এবং নিপেন এই চারজন ট্যাংকের ভেতরে নামলে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাটি দেখে রবি বুনার্জী নামে এক তরুণ ওই অসুস্থ হয়ে পড়া ৪ জনকে উদ্ধার করতে সেপটিক ট্যাংকের নিচে নামলে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবশেষে জাস্টিন নামে এক তরুণ এসে দ্রুত রবি বুনার্জীকে উদ্ধার করলেও ওই ৪ জনকে আর উদ্ধার করতে পারেনি। পরে জাস্টিনও অসুস্থ হয়ে পড়ে।