কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষকে ব্যক্তিগত শয়নকক্ষে রূপান্তর করে প্রায় দুই বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন কলেজের উপাধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরী।
রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৩১০১ নম্বর কক্ষে বসবাসের জন্য বিছানা, এয়ার কন্ডিশনার (এসি), ফ্রিজ, টেলিভিশন, আলনা, চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার এবং জুতা রাখার তাকসহ গৃহস্থালী ব্যবহারের নানা সামগ্রী রাখা রয়েছে।
কলেজটির এক কর্মচারী, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থাকতে চেয়েছেন, বলেন, “স্যার এখানে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন। যদিও তার জন্য বাসা ভাড়া অনুমোদিত, তিনি শ্রেণিকক্ষেই থাকেন। বর্তমানে তিনি ছুটিতে বাড়িতে রয়েছেন।”
এক শিক্ষক জানান, উপাধ্যক্ষ আতাউল হক দুর্নীতিতে জড়িত। তিনি কলেজের বিভিন্ন খাতের অর্থ অনিয়মিতভাবে ব্যবহার করেন। এর আগেও তিনি যে কলেজে কর্মরত ছিলেন, সেখানে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা রয়েছে।
সমকাল অনুসন্ধানে জানা গেছে, আতাউল হক খান চৌধুরী এর আগে ফরিদপুর জেলার পাংশা সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে ২৯ লাখ টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট দুদকের সমন্বিত ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাসার রাজবাড়ী বিশেষ জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাংশা সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে বদলি করা হয়। প্রথমদিকে তিনি কলেজ ডরমেটরিতে অবস্থান করলেও পরবর্তীতে ৩১০১ নম্বর শ্রেণিকক্ষটি দখল করে স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস শুরু করেন।
এদিকে, সরকারি বিধি অনুযায়ী বাড়ি ভাড়ার জন্য তিনি প্রতি মাসে মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ হারে ভাতা গ্রহণ করছেন।
আতাউল হক কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চৌধুরী বাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থান করছেন।
শ্রেণিকক্ষে বসবাসের বিষয়ে জানতে চাইলে আতাউল হক বলেন, “এটা আমি ঠিক করিনি। আমি আর সেখানে থাকব না।” তিনি আরও বলেন, “অধ্যক্ষ স্যার থাকতে বলেছিলেন। বলেছিলেন— একা মানুষ, দূরে কোথাও না থেকে কলেজে থাকেন। এর আগেও এখানে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকসহ আরও অনেকে ছিলেন।”
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “আমি কোনো অনুমতি দিইনি। বিষয়টি আমি এখন আপনার মাধ্যমে জানলাম। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”