দেশের মানুষ আজ এক কঠিন সময় পার করছে। তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। অনেক ব্যাংক যখন গ্রাহকের জমানো টাকা সময়মতো ফেরত দিতে পারছে না, তখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ও আস্থাহীনতা চরমে পৌঁছেছে। এই দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে জনগণ মুক্তি চায়। অতীতের দিকে তাকালে আমরা দেখি, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘাত ও লাশের দীর্ঘ মিছিল। জনগণ আর ক্ষমতার পালাবদলে লাশের খেলা দেখতে চায় না। বিগত ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী শাসনের নিপীড়ন, মিথ্যা মামলা, গুম, খুন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দুঃসহ স্মৃতি মানুষ ভোলেনি। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত বিপ্লবের মাধ্যমে সেই অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। এই ত্যাগের মূল প্রতিজ্ঞা ছিল—ক্ষমতার লোভে আর যেন একটিও প্রাণ না ঝরে। বাংলাদেশে বহুবার গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের প্রকৃত পরিবর্তন আসেনি। এর অন্যতম কারণ হলো ‘লুটপাটের রাষ্ট্রযন্ত্র’। দেশের প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রের যে অংশটি দুর্নীতিগ্রস্ত ও গণবিমুখ হয়ে পড়েছে, তাকে সংস্কার করা অপরিহার্য। এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে কেবল ক্ষমতার হাতবদল হবে, গণমানুষের মুক্তি মিলবে না। দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো। জনগণের প্রত্যাশা, তাদের নেতাদের মধ্যে থাকবে স্বচ্ছ নীতি, অটুট আদর্শ ও গভীর মানবিক গুণাবলি। কিন্তু বাস্তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য, মতবাদের সংঘাত এবং হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডই বেশি দৃশ্যমান, যা হতাশাজনক। এখন সময় এসেছে সব বিভেদ ভুলে কেবল দেশের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার। আসুন, পারস্পরিক সম্মান ও জনগণের ভালোবাসাকে পাথেয় করে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করি। জনগণের ভালো ও মঙ্গলের জন্য আইন প্রণয়ন এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে দলমত নির্বিশেষে সক্রিয় হতে হবে। এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগ। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে বা জনকল্যাণমূলক আইন তৈরিতে জনগণের সরাসরি মতামত (যেমন ‘হ্যাঁ/না’ ভোট) গ্রহণের একটি ডিজিটাল কাঠামো প্রণয়ন করা যেতে পারে। এতে জনসেবার মানসিকতা জোরালো হবে এবং গণতন্ত্র তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাবে। জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বিবাদ চায় না; তারা চায় নিরাপত্তা, সেবা ও শান্তি। এই মৌলিক চাওয়াগুলো পূরণ হলেই আমাদের সকলের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি ও টেকসই শান্তি আসবে।