বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে রাম চন্দ্র নামের এক গ্রাম পুলিশকে (চৌকিদার) হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। রাম চন্দ্র সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব এবং বগুড়া জেলা অটোটেম্পু ও সিএনজি মালিক সমিতির সচিব পদে নিযুক্ত রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে ওই মালিক সমিতির কার্যালয়ে সামনে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী রাম চন্দ্র জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জানা যায়, বগুড়া জেলা অটোটেম্পু ও সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি এবং সান্তাহার পৌরসভার কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা আতাউর রহমান আত্তার সময়ে ২০০০ সালে সচিব পদে নিযুক্ত করা হয় হিন্দু ধর্মাবলী রাম চন্দ্রকে। এরপর ২০০৯ সালের পহেলা জানুয়ারিতে সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশে চাকরি নেন তিনি। একইসাথে দুটি কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রতিদিনের ন্যায় কর্মস্থল শেষ করে সান্দিড়া হিন্দুপাড়া নিজ গ্রামে পরিবার নিয়ে তিনি বসবাস করতেন। সম্প্রতি ২০২০ সালে রাম চন্দ্রের সঙ্গে একই ইউপির বামনীগ্রাম এলাকার গোলাপি বানুকে ভালোবেসে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে ওই সালের ২ সেপ্টেম্বর কোর্ট এফিডেফিট মাধ্যম শেষে তারা সংসার জীবনে আবব্ধ হন। বিয়ের পর থেকে স্ত্রী গোলাপি বানু তার ইচ্ছেনুযায়ী চলাচল করতো। হতো না বনিবনা। বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে আইনগত ভাবে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কল্যাণ সমিতিতে তালাক প্রদান করেন। তালাক নোটিশ পাওয়ার পর থেকে গোলাপী বানু ক্ষিপ্ত হয়ে তার সাথে হট্টগোল সৃষ্টি করে। এভাবে চলতে থাকে দীর্ঘদিন। চলতি বছরের ২৬মে হঠাৎ মুঠো ফোনের মাধ্যমে গোলাপী বানু অকথ্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ ও বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি দেন। এরপর ২৮ মে বিকেলে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ও পুলিশসহ গোলাপি বানুকে পুনরায় রাম চন্দ্রের বাড়িতে জোর পূর্বক প্রবেশ করানোর চেষ্টা করে। এসময় রাম চন্দ্র বাধা দিলে তাকে মারধর ও বাড়ি ভাংচুর করে। এবং রাম চন্দ্রকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবেনা বলে হুমকি ধামকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন প্রভাবশালীরা। এরপর থেকে তিনি সান্তাহার পৌর শহরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে বগুড়া জেলা অটোটেম্পু ও সিএনজি মালিক সমিতির কার্যালয়ে কিছুদিন ধরে বসবাস করছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ দরজা খুলতেই একটি ব্যাগ দেখতে পান তিনি। ব্যাগের ভিতরে দেখতে পান কাফনের কাপড়সহ একটি চিরকুট৷ চিরকুটে লেখা ছিলো “রাম শোন সত্য মিথ্যা বুঝিনা তুমি আগামী দুই দিনের মধ্যে বাবনী গ্রামের গোলাপী বানুর সাথে টাকার বিনিময়ে সব মিটমাট (মিমাংসা) করবে। নইলে সিএনজি অফিসের সচিব পদ আর গ্রাম পুলিশের চাকুরী হারাবে। তবুও যদি না মানো তাহলে তুমিসহ তোমার সহযোগী মৃত্যুর জন্য প্রস্তত থাকো। এই কাফনের কাপর তোমার সঠিক সিদ্ধান্তের উপহার”। এই ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী রাম চন্দ্রসহ তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং থানায় জিডি দায়েরের প্রস্তুুতি নিচ্ছেন তিনি।
সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক বকুল হোসেন জানান, খবর পেয়ে সেখান থেকে কাফনের কাপড়, চিরকুটসহ ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।