রাজধানীর কলাবাগান গ্রীন রোড থেকে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল (এএজি) টাইটাস হিল্লোল রেমার (৫৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে কলাবাগান থানা পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্ট-মর্টেম শেষে রবিবার (০২ মার্চ) দুপুর ২ ঘটিকায় হালুয়াঘাটের জয়রামকুড়া গ্রামে তাহার নিজ বাড়িতে দাফন কাজ সম্পন্ন করেন তার পরিবার। মৃত ব্যক্তির কাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা নেলসন রেমা বলেন আমরা কখনো বিশ্বাস করতে পারিনা হিল্লোল এই কাজ করতে পারে। সে খুবই শান্ত, নম্র, ভদ্র স্বভাবের মানুষ ছিল। সে দীর্ঘদিন যাবত বিষন্নতায় ভূগার কারনেই হয়ত আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। মৃতের কণ্যা ক্যাথি বলেন আমি ও আমার বোন ডোনাল ঘুমাচ্ছিলাম। মা, বাবা আলাদা কক্ষে থাকেন। বাবা অসুস্থ ছিলেন এক সপ্তাহ যাবত। ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাতেন। মা স্কয়ার হাপাতালে জব করেন, সকালে মা ডিউটিতে চলে যায়। পরে মা বাবাকে ফোন করে না পেলে আমাকে ফোন দেয়। তারপর বাবার কক্ষে গিয়ে দেখি বাবা ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। এ বিষয়ে হিল্লোল রেমার বোন পিয়াসা রেমা বলেন আমি শুক্রবার বিকালে দাদার সাথে কথা বলেছি। শনিবার সাড়ে ১১টায় বউদি আমাকে ফোনে বিষয়টি জানালে আমি বিশ্বাস করতে পারি নাই। দাদা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। আমাদের সবসময় খোঁজ খবর নিতেন। আমাদের গ্রামের হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান যেই দাদার কাছে কোন সমস্যা নিয়ে যেত, তিনি কখনো ফিরিয়ে দেন নাই। দাদা অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন। আমরা একটুও জানতে পারি নাই যে দাদা ভিষন্নতায় ভূগছে। এ বিষয়ে আইনজীবীর স্ত্রী অনুভা ম্রং আজকের দর্পন-কে বলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে উনাকে অপসারন করার পর থেকে তিনি খুব দুঃচিন্তায় ছিলেন। পরবতীর্তে জুলাই-আগষ্ট অভ্যূথানের পর দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ায় উনার তেমন কোন ইনকাম ছিল না। মামলা ছিল না তেমন। গত ১মাস যাবত অসুস্থ ছিলেন, প্রতিদিন স্কয়ার হাসপাতালে চেকাপ করাতেন তিনি। গত ১সপ্তাহ যাবত তিনি খুব বিষন্নতায় ভূগছিলেন। সে খুবই গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কিছুই বলতে চাইতেন না। সে তার ইনকাম থেকে কোন আয় করেনি, কোন জায়গা, বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেননি। বর্তমানে আমার চাকুরী ছাড়া আমাদের কোন সঞ্চয়ও নেই। প্রাথমিক ময়না তদন্তে আত্নহত্যা বলা হয়েছে। আমরা কাউকে কোন দোষারোপ করছি না। এডভোকেট টাইটাস হিল্লোল রেমার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অন্তর্বর্তী কমিটির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আর্থিক কারণে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়, এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। রেমা বেশ মেধাবী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অনুজ। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।’ এডভোকেট পাঃ টাইটাস হিল্লোল রেমা ২০১৪-২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়াও ১৯৯৫ সালে গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু) এর কেন্দ্রীয় পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯৭ সালে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হালুয়াঘাটের গারো সম্প্রদায়ের একটি সু-পরিচিত মুখ।