সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রাণীপুরা গ্রামে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ঘাস কাটাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী পরিবারের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ঘটনার জেরে রোববার (২৯ জুন) বিকেলে সংঘর্ষে জড়িত হয় ইমান আলী মণ্ডল ও সাইদুল ইসলাম ফকিরের পরিবার। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৪ জন আহত হন। পরে ইমান আলী মণ্ডল বাদী হয়ে সাইদুল ইসলাম ফকির ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বেলকুচি থানায় চাঁদাবাজি ও লুটপাটের অভিযোগ দিয়ে মামলা দায়ের করেন।
ইমান আলী মামলায় অভিযোগ করেন, সাইদুল ইসলাম বিএনপির কর্মী পরিচয়ে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে তারা তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে ৭ লক্ষ টাকা ও ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। তিনি আরও দাবি করেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের গুরুতর আহত করা হয় এবং ইমান আলী সহ তার পরিবার ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
অপরদিকে, অভিযুক্ত সাইদুল ইসলাম ফকির দাবি করেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইমান আলী একজন চিহ্নিত মামলাবাজ ও মাদক কারবারি, সে আমার শিশুপুত্রকে অপহরণ করে তার বাড়ির টয়লেটে লুকিয়ে রেখেছিল। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্তানকে উদ্ধার করি।”
অভিযুক্ত সাইদুল ইসলামের স্ত্রী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা মোছাঃ রেহানা খাতুন বলেন, “ঘটনার সময় আমি বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম। সংঘর্ষ বা ঘটনার স্থানে উপস্থিত ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বানোয়াট। আমি এই মিথ্যা অভিযোগ মানি না। এই ঘটনার সঠিক ও সুস্থ সমাধান চেয়ে বিচার দাবী করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে মাঠে ঘাস কাটতে গেলে ইমান আলী তাকে গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে। বিষয়টি জানাতে গেলে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং ঘটনাটি ঘটায়।”
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, ইমান আলীর কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় একজন প্রবীণ ব্যক্তি নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা তাকে একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে হুমকি দামকি ও মামলা দিয়ে এলাকাবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। এখন আমরা চাচ্ছি তাকে এলাকা থেকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হোক।”
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা কিছু সন্দেহজনক তথ্য পেয়েছি, যা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। মামলা গ্রহণ করা হয়েছে, তবে সত্যতা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা অভিযুক্ত ধরা হচ্ছে না। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।