গত ৬ জুলাই বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপুর স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গাজীপুর মহানগর বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বহিষ্কৃতদের মধ্যে অন্যতম হলেন টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সাথী। তার বহিষ্কার এবং পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকে ঘিরে গাজীপুরে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
ছাত্র রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল পর্যন্ত দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা
সিরাজুল ইসলাম সাথী ছাত্রজীবন থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ২০০৩ সালে তিনি ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর অবিভক্ত টঙ্গী থানা ছাত্রদলের যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও ছিলেন। মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার দৌড়ে বয়সজনিত কারণে পিছিয়ে পড়লেও ছাত্ররাজনীতির পরে যুক্ত হন স্বেচ্ছাসেবক দলে। একপর্যায়ে তিনি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বহিষ্কার ও মামলা: ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তৃণমূলে
দলের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে বহিষ্কার করা হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলছেন, সাথীর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনো এমন কোনো দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। বরং তিনি বিএনপির দুঃসময়ে রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন, হামলা-মামলা সহ্য করেছেন এবং অন্তত ২৩টি মামলার আসামি হয়েও আন্দোলনে ছিলেন অবিচল।
বহিষ্কারের দুই দিন পর তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও অভিযোগ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। দলীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, চাঁদাবাজির কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাকে ‘স্যাটার্ন গার্মেন্টসের ঝুট নিয়ে সংঘর্ষের মামলায়’ অজ্ঞাতনামা আসামি করে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে—যার সঙ্গে সাথীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা এটিকে “ষড়যন্ত্রমূলক” মামলা হিসেবে দাবি করছেন।
ফেসবুকেই চলছে নীরব প্রতিবাদ
সাথীর গ্রেপ্তারের পর গাজীপুরে দেখা গেছে এক ধরণের ‘নীরব আন্দোলন’। কোনো রাস্তায় মিছিল না হলেও ফেসবুকজুড়ে তার সমর্থনে ছবি বদল, ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। অনেকেই প্রোফাইল পিকচারে সাথীর ছবি বসিয়ে তার মুক্তি দাবি করছেন।
বিশ্লেষকদের মতামত
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র নেতাদের মতে, সিরাজুল ইসলাম সাথীর মতো ত্যাগী নেতা—যিনি ছাত্র জীবন থেকে দল করে এসেছেন—তার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার আগে দলীয় কাউনসেলিং, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ অথবা তদন্ত ছিল প্রয়োজন।
তাদের কথায়, “যারা নিপীড়ন সহ্য করে আন্দোলনে থেকেছেন, তাদের দল থেকে এভাবে বাদ দেওয়া হৃদয়বিদারক।”
তৃণমূলের দাবি: সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান
তৃণমূল নেতাকর্মীরা সিরাজুল ইসলাম সাথীর বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
তারা বলেন, “সাথীরা রাজনীতি করেছেন পেশার জন্য নয়, বিশ্বাসের জন্য। স্বৈরাচারের চোখ রাঙানিকে ভয় না করে যারা রাজপথে থেকেছেন, তাদের এভাবে ভুল বোঝা অনুচিত।”