সুতার মুল্য বৃদ্ধির কারণে কাপড়ের জন্য বিখ্যাত নরসিংদী সদর উপজেলা ও প্রাচ্যের ম্যাচেষ্টার বলে ক্ষেত মাধবদী সহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জেলার শত শত কাপড় উৎপাদনের টেক্সটাইল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ইতিমধ্যে অনেক মিল মালিকরা ফেক্টরী বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। কাপড় উৎপাদন করতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকদের মুজুরী আরও অন্যান্য খরচ দিয়ে লাভ থাকতেছে না মিল মালিকদের। লোকসান দিতে দিতে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছেন অনেক মিল মালিকরা।
এর কারণ জানতে চাওয়া হলে মিল মালিকরা বলেন সুতার দাম দিনদিন বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না কাপড়ের দাম। প্রতি গজে দুই থেকে তিন টাকা করে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত কাপড়। সুতার দাম অনুযায়ী কাপড়ের দাম পাচ্ছেন না মিল মালিকগণ। নরসিংদী সদর উপজেলার সাটির পাড়া, চৌয়ালা, মাধবদী থানার নুরালাপুর, বিবিরকান্দী, শিমুলেরকান্দি, দরীকান্দি, ছোট রামচন্দ্রী, আলগী, পাইকারচর, বালুসাইর, আটপাইকা, কোতোয়ালীরচ, কাশিপুর সহ এসব এলাকার বেশির ভাগ কারাখানাই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক কারখানা প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এতে করে দিন দিন বেকার হয়ে পরছে কারখানার শতশত শ্রমিক কর্মচারী। এ বিষয় নিয়ে মাধবদী থানার ছোট রামচন্দ্রীর কাপড়ের কারখানার মালিক জামাল উদ্দীন, মজিবর সহ আরও কয়েকজন মিল মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুতার দাম দিন দিন বৃদ্ধি করা হলেও বাড়ছে না কাপড়ের দাম। প্রতি গজে দুই টাকা থেকে তিন টাকা করে লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত কাপড়। তারা আরও বলেন, সুতার দাম অনুযায়ী আমরা কাপড়ের দাম পাচ্ছি না সেই জন্য কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা লোকসান দিয়ে আর কত চালাবো কারখানা। আমাদের পুজিই শেষ হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন আমাদের এই ব্যবসায়ীদের দিকে একটু নজর দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের দিকে একটু নজর দেন তাহলে আমরা সকল ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। নতুবা রপ্তানিতেও পরতে পারে এর প্রভাব।এদিকে এফবিসিসিআই পরিচালক ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রসিডেন্ট আলী হোসেন শিশিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাংলাদেশের কতিপয় অসাধু সুতা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে সুতা মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দিন দিন সুতার দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। এর ফলে কাপড় উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ মুল্যে সুতা ক্রয় করে কাপড় উৎপাদন করে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। আফ্রিকাতে তুলার দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশের সুতা ব্যবসায়ীরা সুতার দাম বাড়িয়ে দেয়। অথচ বর্ধিত মুল্যে ক্রয়কৃত সুতা বাংলাদেশে আমদানি করে সুতা তৈরি করে বাজারজাত করতে কমপক্ষে তিনমাস সময় লাগে। এখানে আমাদের প্রস্তাবনা তাঁতশিল্প রক্ষায় সুতার মোড়কের গায়ে উৎপাদনের তারিখ ও সর্বোচ্চ খুচরা মুল্য লিখে দিতে হবে। তাহলে সিন্ডিকেট সুতা ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি করতে পারবেনা। বাজার স্থিতিশীল থাকবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতশিল্প বেঁচে থাকবে। এছাড়া নরসিংদী, মাধবদী ও নারায়ণগঞ্জের টান বাজারের কতিপয় অসাধু সুতা ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় বিভিন্ন স্পিনিং মিলের সুতা কিনে তাদের গোডাউনে মজুত করে, পরবর্তীতে সিন্ডিকেট করে চড়া দামে বিক্রি করে। ইতিমধ্যে নরসিংদী জেলার প্রায় ৭০ ভাগ তাঁত ফেক্টরী বন্ধ হয়ে গিয়েছে,সুতার অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি ও সুতার অবৈধ মজুমদারদের কারসাজির কারণে। নরসিংদী সহ সারা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি তাঁতশিল্প রক্ষায় ও রপ্তানি বাজারের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সুতার অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট,শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় এবং শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্টদের ইতিমধ্যে অবগত করা হয়েছে।