কেন্দুয়া নিজের স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে প্রবাসী এখলাছ উদ্দিন (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনা জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. লুৎফর রহমান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. লুৎফর রহমান আজ রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, দাম্পত্য কলহের জেরে শ্বশুর বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ এখলাছ উদ্দিন গতকাল রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আগুনে তাঁর শরীরের প্রায় ৭৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
তিনি পাঁচ দিন ধরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর মৃতদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় থানায় আগে দায়ের করা মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মৃত এখলাছ উদ্দিন কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের পাঁচহার গ্রামের আমজদ আলীর ছেলে। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর ভোরে জেলার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের বাড়রি-সুতিয়াপার গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আগুনে পুড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন এখলাছ উদ্দিন।
পারিবারিক তথ্যসূত্রে জানা যায়, আনুমানিক প্রায় ৬ বছর পূর্বে এখলাছ উদ্দিনের সঙ্গে মদন উপজেলাধীন বাড়রি গ্রামের খায়রুল মিয়ার মেয়ে মুক্তা আক্তার (৩০) এর বিয়ে হয়। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে বিয়ের কিছুদিন পর এখলাছ উদ্দিন প্রথমে মালয়েশিয়া যান এবং পরে সেখান থেকে সৌদি আরব যান। এই আর্থিক স্বচ্ছলতা আনার চেষ্ঠাই পরবর্তীতে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বিদেশ থেকে তিনি তার স্ত্রীর কাছে অনেক টাকা প্রেরণ করেন। এ ছাড়াও এখলাছ মিয়া তার শ্বশুর-শাশুড়িকে ৬ লাখ টাকা ধার দেন।
সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে শ্বশুর-শাশুড়িকে দেওয়া ধারের টাকা ফেরত আনতে স্ত্রীকে চাপ দেন। এতেই পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্ব বাঁধে। একপর্যায়ে মুক্তা রাগারাগি করে তার পিত্রালয়ে চলে যান। গত ১২ নভেম্বর মুক্তা মোবাইলে ফোন করে এখলাছ উদ্দিনকে তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান।
রাতের খাওয়া সেরে তারা পাশাপাশি ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ভোরের দিকে ঘুমন্ত এখলাছ উদ্দিনের হাত-পা বেঁধে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে এখলাছ উদ্দিনকে উদ্ধার ও চিকিৎসার জন্য কেন্দুয়া হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করা হয়।
এখলাছ উদ্দিনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলেন, গত কয়েক দিন আগে মুক্তা আক্তার তাঁর বাবার বাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে গত সোমবার সকালে এখলাছ উদ্দিন শরীরে পেট্রল মেখে শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে মুক্তার ঘরে দরজা লাগিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। পরে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এদিকে মৃত এখলাছ মিয়ার ভাগ্নে সাকিব মিয়া বলেন, বিদেশ থাকাকালে মামা তার সমস্ত আয় রোজগারের টাকা তার স্ত্রীর কাছে পাঠাতেন। এ ছাড়া, মামীর কথায় মামা তার শ্বশুর-শাশুড়িকে ৬ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কলহ শুরু হয়।
গত রবিবার মামী ফোন করে আমার মামাকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান। সেখানে মামার হাত-পা বেঁধে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে মামার সমস্ত শরীর পুড়ে যায়। এ ঘটনায় এখলাছ উদ্দিনের চাচাতো ভাই কছিম উদ্দিন বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার মদন থানায় একটি মামলা করেন। এতে মুক্তাকে প্রধান আসামিসহ তাঁর মা ও বাবার নাম উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাওহীদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি এখলাছ উদ্দিনের শ্বশুরের বসতঘরের ভেতরেই সংঘটিত হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।