রাজনৈতিক বিতর্কে প্রায়শই দেখা যায় যে কোনো পক্ষের বক্তব্য নিয়ে একাধিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে, বিএনপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি একজন নেতা “মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান”এর যে মন্তব্য এসেছে, তার দ্বিতীয় কোনো ব্যাখ্যা খোঁজা বা গ্রহণ করার সুযোগ দেখতে পাচ্ছেন না বলে রাজনৈতিক মহল মন্তব্য করেছেন। কেন দ্বৈত ব্যাখ্যার অবকাশ নেই?
”রাজনীতিতে মতপার্থক্য স্বাভাবিক হলেও, কিছু বক্তব্য এতটাই স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয় যে সেগুলোকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে, ওই নেতার মন্তব্যটি সরাসরি রায় এবং বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায়, এটিকে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখার বদলে, এক ধরণের দুষ্টুমিপূর্ণ পরিকল্পনা হিসেবেই দেখা যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন মনে করেন।
একজন আইনজীবীর দৃষ্টান্ত ও ভিন্নতা :
একটি সাধারণ উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত ও প্রয়াত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া – উভয়েরই আইনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
” প্রশ্ন: ব্যারিস্টার রফিক-উল হক যদি একই সময়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীর আইনজীবী হন, তার মানে কি এই দাঁড়ায় যে শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া অভিন্ন ব্যক্তি?
“উত্তর: অবশ্যই না। এর অর্থ কেবল এটাই যে একজন পেশাদার আইনজীবী হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন।
”তেমনিভাবে, ১৭ নভেম্বর যে রায় প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে—কেউ রায়টিকে সমর্থন করতে পারেন আবার কেউ এর সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু, রায়টি ঘোষণার মাত্র ১০ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার দুঃসাহস দেখানোর অর্থই হলো একটি বৃহত্তর এবং অসৎ পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেওয়া। আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে, দ্রুত এমন মন্তব্য করা এক ধরণের চক্রান্তেরই প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
মামলার তুলনামূলক চিত্র ও প্রশ্ন :
বিগত ১৬ বছরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা (অনেকের ক্ষেত্রেই শত শত) দায়ের করা হয়েছে। সেখানে, যে ব্যক্তিটি বর্তমানে এই বিতর্কিত মন্তব্যটি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল খুবই কম—যদি ভুল না হয়, ২০১৪ সালের দিকে মাত্র একটি মামলা ছিল।
তুলনামূলকভাবে কম আইনি চাপের মধ্যেও থাকা এই ব্যক্তিকেই বিএনপি কিশোরগঞ্জ থেকে আসন্ন নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে। যার কারণে জনমনে প্রশ্ন তোলে যে, যে ব্যক্তি এত সহজে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস দেখান, তাঁকে কেন এমন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দায়িত্ব দেওয়া হলো?
এই সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক মহল মনে করে যে, বিএনপি এই বক্তব্যের দায় এড়াতে পারে না। এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তারা সরকারের বিচারিক প্রক্রিয়াকে অস্থিতিশীল করার একটি অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যার কোনো সৎ উদ্দেশ্য নেই।