বিবিসি বাংলা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে জানা যায় দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের রাজকুমারের সার্জারি সম্পন্ন হয়।
মৃত্যুর পর অঙ্গ দানের অঙ্গীকার করেছিলেন ভারতের রাজধানী দিল্লির বাসিন্দা মীনা মেহতা।এখন তার দান করা হাত ফিরিয়ে দিয়েছে দিল্লির বাসিন্দা রাজকুমার ও তার পরিবারের জীবন।
এর ফলে সাড়ে তিন বছরের ক্রমাগত লড়াইয়ের পর আরও একবার রাজকুমার হাতে তুলে নিতে পারবেন রঙ এবং ব্রাশ। রেল দুর্ঘটনায় দুই হাত হারানোর আগে তিনি রঙের কাজই করতেন।
দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সফল ভাবে অঙ্গদাত্রী মীনা মেহতার হাত প্রতিস্থাপন করেন রাজকুমারের দেহে।
রাজকুমার বলেন, “হাত খোয়ানোর পর ভাবতে পারিনি আবার দুই হাত ফিরে পাব। অঙ্গদাত্রী মীনা মেহতা ও তার পরিবারের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব। চিকিৎসকদের কাছে আমি ঋণী!” কথা বলার সময় আবেগে গলা ধরে আসছিল তার।
অঙ্গদাত্রী মীনা মেহতা দিল্লির একটি নামী স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন। মৃত্যুর পর যে তিনি অঙ্গ দান করতে চান, সে কথা আগেই জানিয়ে গিয়েছিলেন তার পরিবারকে।
তার ভাইপো জাভেদ মেহতা বলেন, “মৃত্যুর পর আমার পিসির কোনও অঙ্গ যদি কারও জীবন ফেরাতে পারে তার চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে!”
শুধু হাতই নয়, মৃত্যুর পর অন্যান্য অঙ্গও দান করে একাধিক প্রাণ বাঁচিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষিকা, যিনি ৬২ বছর বয়সে প্রয়াত হন।
এদিকে চিকিৎসরা জানিয়েছেন, রাজকুমার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। ফিরতে পারবেন পুরনো পেশাতেও।
চিকিৎসক মহেশ মঙ্গল এবং নিখিল ঝুনঝুনওয়ালার নেতৃত্বে একটি বিশেষ মেডিক্যাল টিম এই বিরল ‘বাইল্যাটারাল হ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট’টি করেন।
প্লাস্টিক অ্যান্ড কস্মেটিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক নিখিল ঝুনঝুনওয়ালা বলেন, “দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা ধরে চলা অস্ত্রোপচারের পর আমরা সফলভাবে ডোনার মীনা মেহতার দেহ থেকে তার হাত রাজকুমারের দেহে প্রতিস্থাপন করি।”
বিশেষ ভাবে তৈরি একটি মেডিক্যাল টিম এই সফল অস্ত্রোপচার করেছে, যা উত্তর ভারতে নজিরবিহীন।
“বাইল্যাটারাল হ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না। এই অস্ত্রোপচার সহজ নয়। চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান এবং অন্যান্যদের মিলিয়ে প্রায় ২০ জনের একটি দল ছিল এই অস্ত্রোপচারের সময়।”
“শেষ পর্যন্ত সফল ভাবে আমরা অঙ্গদাত্রীর হাত রাজকুমারের দেহে প্রতিস্থাপন করতে পেরেছি,” বলেছেন প্লাস্টিক অ্যান্ড কস্মেটিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান মহেশ মঙ্গল।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রাজকুমারের এবার বাড়ি ফেরার পালা।
“রাজকুমার আজ (বৃহস্পতিবার) বাড়ি ফিরে যাবেন। সব কিছু ঠিক থাকলে আজ থেকে এক বা দেড় বছর পর আবার পেইন্টিং করতে পারবেন তিনি”, বলেছেন ওই চিকিৎসক।