চার দশকের বেশি সময় ধরে ফারাক্কার প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ’ হচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মায় শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে যাচ্ছে। এতে পদ্মা নদীর অববাহিকায় থাকা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলাসহ নদী তীরবর্তী অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এক সময়ের প্রমত্তা পদ্মা শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পদ্মায় পানি কমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহমান পদ্মার শাখা নদীগুলোও শুকিয়ে গেছে। এতে এ অঞ্চলে যেমন তাপমাত্রা বাড়ছে তেমনি কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন জেলেরা।
ভারত থেকে বয়ে আসা গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পদ্মা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী। একসময় এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা চলতো এ নদীকে কেন্দ্র করে। ১৯৭৫ সালে ভারতের গঙ্গা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে ভারত সরকার। এরপর থেকে পদ্মা নদীতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বদলে যায় পদ্মা। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে পদ্মা ধূ-ধূ মরুভূমিতে পরিণত হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিলে পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম ও শহর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মা দিন দিন পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল বালুচর জেগে উঠছে। দৌলতপুর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে দু’টি আংশিক ও দু’টি ইউনিয়নে শুকনো চর জেগে উঠেছে। নদীতে মাছ নেই, জেলেরা নৌকা দিয়ে জাল টেনে নিজেদের খাবারের মাছও জোগাড় করতে পারছেন না। ফলে পদ্মা নির্ভর জেলেদের জীবিকা এখন হুমকির মুখে।
ফিলিপনগর পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা দৌলতপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সরকার আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা পদ্মা নদীর পাড়ের মানুষ এক সময় নদীর গর্জনে রাতের ঘুম ভেঙে যেত। সেই পদ্মা এখন নীরব-নিথর। শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় পদ্মার বুক জুড়ে ধূ-ধূ বালুচর জেগে উঠেছে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে পানি চুক্তি হয়েছিল সে চুক্তি অনুযায়ী পদ্মায় পানি প্রবাহমান থাকলেও মরুকরণ থেকে কিছুটা হলেও পদ্মা রক্ষা পেতো। ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে। পদ্মায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় এসব সেচ প্রকল্পের আওতায় হাজার হাজার একর জমি চাষাবাদের জন্য অত্যাধুনিক গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। তবুও সেচ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী রামকৃঞ্চপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এখানকার জীব বৈচিত্রের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। নদীতে জেলেরা মাছ পাচ্ছে না। ফলে তারা কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছে। পদ্মা তীরবর্তী এলাকার নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পানি না পাওয়ায় পদ্মা পাড়ের পরিবেশ ও আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আমরা পদ্মাপাড়ের মানুষের প্রত্যাশা সরকার পদ্মার পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পানি চুক্তির পর প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পানি পর্যবেক্ষণ চলে। এ চুক্তি অনুযায়ী যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তারা ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানি পর্যবেক্ষণ করছেন। পাশাপাশি আরেকটি প্রতিনিধি দল পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আড়াই হাজার ফুট উজানে এ পর্যবেক্ষণ করছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী খাদেমুল ইসলাম বলেন, দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রতিবছরই ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর নলকূপে পানি উঠছে না। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর এভাবে নেমে যেতে থাকলে ১০ বছর পর এ অঞ্চলে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।(Source;Daily News Bangla)