যশোর জেনারেল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের ডাক্তার শাহীন রেজার অপচিকিৎসায় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ডলি খাতুন নামে একজন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তিনি নাক-কান-গলা বিভাগের ডাক্তার হলেও দেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওই নারীকে সিজার করিয়েছেন। অপারেশনের সময় কেটে খেলেছেন খাদ্য ও মূত্র নালী।
এ ঘটনায় রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় ওই ক্লিনেকে যেয়ে রোগীর স্বজনরা ডাক্তার শাহীন রেজাকে অপারেশন কক্ষে আটকে রেখে বিচার দাবি করেন। উত্তেজিত জনতা ডাক্তারকে মারতে উদ্যত হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।রোগীর স্বজনরা জানান, ২৯ মে বাঘারপাড়া উপজেলার চানপুর গ্রামের মইনুল ইসলামের প্রসূতি স্ত্রী ডলি খাতুন যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে ওই ক্লিনিকে ভর্তি হন। এসময় সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর যশোর জেনারেল হাসপাতালের নাক-কান গলা বিভাগের ডাক্তার শাহীন রেজা তার সিজার করান। এসময় ওই প্রসূতি একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
সেখানে তিনদিন চিকিৎসা শেষে রোগীর স্বজনরা বাড়িতে চলে যান। কিছুদিন পর রোগীর অবস্থার অবনিত হলে স্বজনরা তাকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার করে জানানো হয় রোগী অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন। তার খাদ্য ও মূত্র নালী সিজারের সময় কেটে ফেলা হয়েছে। পরে খাদ্য ও মূত্র নালী এক সাথে সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে মূত্র নালী নিয়ে রোগীর টয়লেট বের হচ্ছে।রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশনের সময় ডাক্তার শাহীন রেজা নিজেকে গাইনি ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীর অপারেশন করেছেন।
পরবর্তীতে রোগীর সমস্যা দেখা দিলে খোঁজ খবর নিয়ে তারা জানতে পারেন ওই ডাক্তার সদর হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের। তিনি কোনো গাইনি ডাক্তার নন। তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।অপর একটি সূত্র জানায়, ডাক্তার শাহীন রেজা যশোর জেনারেল হাসপাতালের ইএনটি বর্হিবিভাগে রোগী দেখেন। তিনি কোনো সার্জরি ডাক্তার নন। কিন্তু শহরের ৪ থেকে ৫টি ক্লিনিকে বিভিন্ন ধরনের সার্জারি করেন। ১৫ দিন আগেও তিনি একটি ক্লিনিকে এক রোগীর পিত্তথলির পাথর অপরেশন করে বির্তকে পড়েন। ওই রোগীও অপচিকিৎসার শিকার হন। বর্তমান রোগীটি ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রোগীর বোনের ছেলে সাকিবুজ্জামান সাকিব জানান, অপারেশনের পরে ডাক্তার বা প্রতিষ্ঠান তার ফুপুর কোনো দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। বর্তমানে রোগী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ পর্যন্ত রোগীর পেছনে প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু রোগী কোনোভাবেই সুস্থ হচ্ছেন না। এ ঘটনায় তিনি প্রশানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই জাহিদুল ইসলাম জানান, ক্লিনিকে ডাক্তার ও রোগীর স্বজনদের হট্টগোল হচ্ছে মর্মে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।
রোগীর স্বজনরা মৌখিক অভিযোগ করেছেন যে ডাক্তারের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে ওই নারী। আর ডাক্তার বলছেন, তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করতে চেয়েছিলেন রোগীর স্বজনরা। কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।অভিযুক্ত ডাক্তার শাহীন রেজা জানান, তিনি গাইনি বা সার্জরি বিভাগের ডাক্তার নন সত্যি। যশোর জেনারেল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে কর্মরত আছেন। এমবিবিএস ডাক্তার সকল চিকিৎসা ও অপারেশন করতে পারেন বলে দাবি করেন তিনি। রোগীর স্বজনেরা আগে কোনো অভিযোগ করেনি। একটি চক্র তাকে ফাঁসাতে চেষ্টা করছে বলে উল্টো তার অভিযোগ।
রোগীর চিকিৎসায় কোনো ভুল হয়েছে কিনা জানতে হলে আগে তাকে রোগীর কাগজপত্র দেখতে হবে বলে জানান হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক