গত রবিবার ১০ নভেম্বর বগুড়া দুপচাঁচিয়া উপজেলার জয়পুরপাড়া এলাকায় ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’ নামে নিজ বাসায় গৃহবধূ উম্মে সালমা খাতুন (৫০), স্বামী-আজিজুর রহমান, গ্রাম জয়পুরপাড়া, হত্যার পর ডিপ ফ্রিজের ভিতর ঢুকিয়ে রাখে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় জনবহুল এলাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী শিক্ষক আজিজুর রহমান (৫৬) ভাইস প্রিন্সিপাল ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা মসজিদের খতিব এর বাড়িতে হত্যাকান্ড এবং হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজের ভিতর রাখার মত নৃশংসের ঘটনায় উক্ত এলাকায় রীতিমতো ডাকাতি সহ হত্যা আতফ ছড়িয়ে পড়ে। র্যাব-১২, বগুড়া দ্রুত ঘটনাস্থল (ক্রাইম সিন) পরিদর্শন করে এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িত আসামী গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে ছায়া তদন্তসহ অভিযান পরিচালনা করে। মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর হত্যাকারী সন্দেহে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ভিকটিমের ছোট ছেলে মোঃ সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯), পিতা আজিজুর রহমান কাহালু খানার অন্তর্গত পাঁচপীর আড়োবাড়ী এলাকায় জনৈক মোঃ রমজান মোল্লা (আসামীর দাদা) এর বাড়ি হতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। গ্রেফতার পরবর্তী তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম উম্মে সালমা খাতুন (৫০) এর সাথে আসামী মোঃ সাদ বিন আজিজুর রহমানের হাত খরচের টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবৎ ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিলো এবং বাসা থেকে প্রায় প্রতিদিনই ৫০০-১০০০ টাকা হারিয়ে যেতো। ঘটনার দিন সকালে তার মা ভিকটিম উম্মে সালমা খাতুন (৫০) এর সাথে হাত খরচের টাকা নিয়ে কথার কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডা হয়। পরে আসামী রাগ করে সকালের নাস্তা না খেয়ে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুপচাঁচিয়া দারুসসুন্নাহ কামিল মাদ্রাসায় ক্লাস করার নিমিত্তে চলে যায়। মাদ্রসায় সকাল ১১ টায় ক্লাসের বিরতি হলে মাদ্রাসার আশপাশ তার বাসার কাছাকাছি এলাকায় ঘুরে বেড়ায় আনুমানিক সাড়ে ১২টায় আসামী বাসায় প্রবেশ করে দেখতে পান যে, তার মা ভিকটিম উন্মে সালমা খাতুন (৫০) বাসায় বসে একা বটি দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার তরকারি কাটাকাটি করছিলো। এমতাবস্থায়, আসামী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার মায়ের পিছন দিক থেকে নাক-মুখ চেপে ধরে ধস্তাধস্তি শুরু করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার মা বাঁচার জন্য চেষ্টা করতে থাকলে ভিকটিমের হাতের তর্জনী আঙ্গুলের নীচে তরকারি কাটার বটি লেগে হালকা কেটে যায়। পরে আসামী তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ভিকটিমের নাক-মুখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে ভিকটিমের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে হত্যা নিশ্চিত করে।মৃত্যু পরবর্তীতে আসামী মোঃ সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯) ভিকটিম উম্মে সালমা খাতুন এর দুই হাত ভিকটিমের ওড়না দিয়ে বেঁধে বাসায় থাকা ডিপ ফ্রিজের ভিতর রেখে ফ্রিজের ঢাকনা লাগিয়ে দেয়। ঘটনাটি ডাকাতির ঘটনা হিসেবে সাজানোর জন্য আসামী বাসায় থাকা কুড়াল দিয়ে তার বাবা এবং মায়ের বেডরুমে থাকা আলমারিতে কয়েকটি কোপ মেরে কুড়াল সেখানে রেখে বাসাব মেইন গেইটে তালা দিয়ে বের হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরে আসামী নিজেই আবার মেইন গেটের তালা খুলে বাসায় প্রবেশ করে তার বাবা আজিজুর রহমান (৫৬) কে ফোন করে জানায় যে, মাকে বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনে কথা বলার ৩-৪ মিনিটের মধ্যেই আজিজুর রহমান (৫৬) বাসায় চলে আসে এবং বাসায় কিছুক্ষণ খোঁজাখুজি করে না পেয়ে ভিকটিমের ভাইদের ফোন করে। ফোন পেয়ে ভিকটিমের ছোট ভাই সহ প্রতিবেশী আরও অনেকেই বাসায় আসলে আসামী মোঃ সাদ বিন আজিজুর রহমান সু-কৌশলে তার বাবা এবং দুই মামাকে দিয়ে ছাদে ও বাসার ভিতরে সমস্ত জায়গায় খোঁজাখুজি করার অভিনয় করে। এক পর্যায়ে আসামী ভিকটিমের ছোট ছেলে মোঃ সাদ বিন আজিজুর রহমান (১৯) নিজ হাতেই ডিপ ফ্রিজের ঢাকনা খুলে ভিকটিম উম্মে সালমা খাতুন (৫০) এর মৃত দেহ উদ্ধার করে এবং ডাকাত দল এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বগুড়া দুপচাঁচিয়া থানায় হস্তান্তর করা হবে।