কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারে বদলে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পিযূষ কুমার সাহার দক্ষ ব্যবস্থাপনায় অতীতের যেকোন সময়ের চেয়েও রোগীরা এখন আন্তরিকতাপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন।
প্রয়োজনীয় জনবল সংকট থাকা স্বত্বেও এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সমন্বয় করে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নানা সংকট মোকাবেলার মাধ্যমে মিরপুরে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ এবং বহির্বিভাগের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম এবং সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে মিরপুরে স্বাস্থ্যখাতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অর্জন এবং এক অনন্য সুন্দর সফলতা বলে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয়রা।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সরজমিনে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গেলে দেখতে পাওয়া যায় ৫০ শয্যর এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে প্রায় ৭০ এর অধিক। এত রোগীর চাপ সামাল দিতে কতৃপক্ষকে তাই নিতে হচ্ছে বাড়তি দায়িত্ব। ২৫ জন নার্স ও ৩ জন কনসালটেন্ট এবং ১০ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসা সেবা ভালো হওয়ার কারণে রোগী বেড়ে যাওয়ায় এখানে লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন বলে ভূক্তভোগী রোগীরা মনে করছেন।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার ভিতরে রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের জন্য নরমাল ডেলিভারী এবং সিজারিয়ান সেকশন। এনসিডি কর্ণার যার মাধ্যমে রোগী ১ মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে ঔষুধ পাবে চিকিৎসার পাশাপাশি।
এছাড়াও ডায়বেটিকস পরীক্ষা, চক্ষু সেবা, টেলিমেডিসিন, ফিজিওথেরাপি সেবা, যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগীদের জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষুধ প্রদান। রয়েছে ব্লাড টেষ্ট, এক্সরে, ইসিজি, আলটাসনোগ্রাফি বিনামূল্যে করার ব্যাবস্থা। বিনামূল্যে টিকা কার্যক্রম (ইপিআই) ব্যাবস্থা। মহিলাদের জন্য রয়েছে জরায়ুর মুখে ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণে আলাদা চিকিৎসা ব্যাবস্থা। এছাড়াও বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে আলাদা কেবিন সহ ২৪ ঘন্টা এম্বুলেন্স সার্ভিস।
হাসপাতালটিতে গত ১০ ডিসেম্বর সরজমিনে বর্হিবিভাগে গেলে সেখানে দেখা যায় ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে সাধারণ রোগীদের বাড়তি সিরিয়াল। রোগীদের লম্বা লাইন। জানা যায়, এই বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জন মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। রোগের ধরন অনুযায়ী এখানে ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসক দিয়ে চলে চিকিৎসা সেবা ও অভিঙ্গ চিকিৎকসদের কাছে থেকে প্রেসক্রিপশন এবং হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে কয়েক ধরণের ঔষুধ দেওয়া হচ্ছে এই বর্হিবিভাগে।
সিরিয়ালে দাড়ানো একজন সেবা গ্রহিতার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এখানকার সরকারি ঔষুধের মান ভালো বলে জানান। তিনি বলেন, “আমি একজন অটো চালক। হাত ও ঘাড়ে ব্যাথা। বাইরে ঔষুধের অনেক দাম কিনতে পারিনা। এখানকার ঔষুধ ভালো। হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছি ফিরতে একটু দেরি হবে সেজন্য ভাবলাম বসে না থেকে এইখানে ডাক্তারকে আমি একটু সমস্যার কথা বলি তাহলে একটু উপকারও হবে। আবার এইখান থেকে বিনামূল্যে ঔষুধও পাবো। তাই এখানে আসছি”। সিরিয়ালে দাড়াঁনো আরও কয়েকজন সেবা গ্রহিতাদের সাথে কথা বললে তারাও জানান এই হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ভালো ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসার পাশাপাশি সরকারি ঔষুধ দেওয়া হয় তাই এই হাসপতালের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পিযুষ কুমার সাহার সাথে কথা বললে তিনি জানান, “ মিরপুর উপজেলাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এই হাসপাতালটিকে সেবা প্রদানে আস্থার জায়গা হিসেবে দাঁড় করাতে আমরা বদ্ধপরিকর। এছাড়াও আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য বাস্তবায়নে গ্রামেও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।