এনটিসির ১২ টি বাগানের চা-শ্রমিকদের ৩ মাসের বকেয়া মজুরি-রেশন পরিশোধের দাবি সরকারের মালিকাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেডে ১২ টি চা-বাগানের শ্রমিকদের ৩ মাসের বকেয়া মজুরি-রেশন পরিশোধ এবং প্রায় ১৯ মাসের বকেয়া পিএফ চাঁদা জমা প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ন হাজরাসহ নেতৃবৃন্দ ২৪ নভেম্বর দুপুরে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপিটি অন্তবর্তী সরকারের শ্রম উপদেষ্টা বরাবর পেশ করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন স্মারকলিপিটি গ্রহণ করে এনটিসির চা-শ্রমিকদের সমস্যার বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের ঊর্দ্ধতন মহলের সাথে কথা বলবেন বলে চা-শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস্থ করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মধু রজক, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুভাষ গৌড়, সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষèী রানী বাক্তি, প্রচার সম্পাদক কাজল হাজরা, শ্যামল রায়, শত্রুঘ্ন কৈরী।স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় সরকারি মালিকানাধীন (৫১ শতাংশ শেয়ার) এনটিসির ১২ টি বাগানের ১১,২৮৬ জন শ্রমিক এবং ২৪৮ জন কর্মচারীসহ প্রায় ৫০ হাজার চা-জনগোষ্ঠি গত ২২ আগষ্ট’২৪ থেকে মজুরি-রেশন না পেয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এনটিসির ১২ টি বাগানের মধ্যে হবিগঞ্জ জেলায় সুরমা চা-বাগান, তেলিয়াপাড়া চা-বাগান, পারকুল চা-বাগান, জগদীশপুর চা-বাগান, চন্ডীছড়া চা-বাগান, মৌলভীবাজার জেলায় বিজয়া চা-বাগান, মাধবপুর চা-বাগান, পাত্রখোলা চা-বাগান, কুরমা চা-বাগান, চাম্পারায় চা-বাগান, মদনমোহনপুর চা-বাগান, প্রেমনগর চা-বাগান এবং সিলেট জেলায় লাক্কাতুরা চা-বাগান অবস্থিত। ভৌগলিকভাবে এই ১২ টি বাগানের মধ্যে ১০ টি বাগানই প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় এসব বাগানের শ্রমিকদের বাইরে এসে কাজ করার সুযোগ নেই বললেই চলে। যার কারণে এনটিসির ১২ টি চা-বাগানের শ্রমিক পরিবারে নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্দ্ধগতির সময়ে দৈনিক মাত্র ১৭৮.৫০ টাকা মজুরিতে এমনিতেই চা-শ্রমিকদের অর্ধাহার-অনাহারে কাটাতে হয়। তার উপর যদি শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শ্রমিকদের কি অবস্থায় পড়তে হয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। শ্রমিক পরিবারের শিশু সন্তানরা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করলেও অসহায় পিতামাতা সন্তানের মুখে সামান্যতম খাবার তুলে দিতে পারছেন না। মজুরি বন্ধ থাকায় শ্রমিক পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখাও বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। শুধু মজুরি-রেশনই নয়, এনটিসির ১২ টি বাগানের শ্রমিকদের পিএফ চাঁদাও প্রায় ১৯ মাস যাবত বন্ধ রয়েছে। এনটিসির বাগানের চা-শ্রমিকরা অন্তবর্তী সরকারের নিকট মজুরি-রেশন পরিশোধের দাবিতে আবেদন-নিবেদন করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে বাধ্য হয়ে এক মাসের বেশি কর্মবিরতি (২১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে) পালন করে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন, কিন্তু তাতেও সরকারের টনক নড়ছে না। আন্দোলনের মুখে সরকার শ্রমিকদের মধ্যে ২০/১০ কেজি করে চাল বিরতণ দায় এড়িয়ে চলেছে। অন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ৫ আগষ্টের পর এনটিসির চেয়ারম্যানসহ বোর্ডের কর্মকর্তা পালিয়ে যাওয়ায় এবং কৃষি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ঋণ না পাওয়ায় শ্রমিকদের মজুরি-রেশন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ কেন এনটিসির বোর্ড পুর্নগঠন করা হচ্ছে না তার কোন উত্তর নেই। অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে বিচারপতি, সচিব, আইজিপি, ডিআইজি, ডিসি, এসপি, ইউএনও সহ সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপকভাবে রদ-বদল, ওএসডি ও বরখাস্ত করে তদস্থলে পুণপদায়ন করেছেন। এমন কি সরকারের কলেবরও একাধিকবার বৃদ্ধি করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রপার চ্যানেলে লিখিতভাবে অভাব-অভিযোগ জানালে সরকার যৌক্তিক দাবি আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করবে। কিন্ত এনটিসির শ্রমিকরা বার বার লিখিতভাবে জানানোর পরও শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান করা হয়নি। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার ১০০ দিন পূর্তির ভাষণে বিগত সরকারের ন্যায় ব্যাপক সাফল্যের বার্তা প্রচার করেন। সরকার প্রধান বলছেন রির্জাভে হাত না দিয়েই ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশী ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। তাহলে শ্রমিকদের মজুরি-রেশনের সামন্যতম অর্থ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে কেন ব্যবস্থা করা হচ্ছে না? চা-শ্রমিকরা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন অতীতের সরকারগুলোর মতো অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছেও চা-শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা উপেক্ষিত।স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয় শুধু এনটিসির বাগানই নয়, সমগ্র চা-শিল্পের শ্রমিকরা আজ কঠিন সময় পার করছেন। চা-শ্রমিকরা বংশ পরস্পরায় প্রায় ১৭০ বছর যাবত চা-বাগানে বসবাস করে বনের বাঘ-ভাল্লুক, সাপ-জোঁকসহ হিংস্র জীবজন্তুকে মোকাবিলা করতে গিয়ে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে চা-শিল্পকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। অনাহার-অর্ধাহার ক্লিষ্ট চা-শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে রেকর্ড পরিমান চা-উৎপাদন সম্ভব হয়। চা-শিল্পের ইতিহাসে ২০২৩ সালে লক্ষ্য মাত্রা অতিক্রম করে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। অথচ যাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে চায়ের উৎপাদন ও মুনাফা অব্যাহতভাবে বাড়ছে বর্তমান অগ্নিমূল্যের বাজারে সেই চা-শ্রমিকদের মজুরি সর্বোচ্চ ‘এ’ ক্লাস বাগানে দৈনিক ১৭৮.৫০ টাকা এবং ‘বি’ ও ‘সি’ ক্লাস বাগানে আরও কম। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই মজুরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নতুন মজুরি কার্যকরের নাম নেই। অগ্নিমূল্যের এই বাজারে একজন মানুষের তিন বেলা খাবার খরচ ১৫০/২০০ টাকা লাগে। এই হিসেবে ৬ সদস্যের একটি শ্রমিক পরিবারে শুধু খাওয়া খরচের জন্য ৮০০/১০০০ টাকার নিচে দিন চলে না। চা-উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চা-শ্রমিকদের মজুরিসহ সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। শ্রীলঙ্কা সরকার গত ৩০ এপ্রিল ২০২৪ চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৭০% বৃদ্ধি করে ১০০০ রুপি থেকে বাড়িয়ে ১৭০০ রুপি (প্রায় ৫.৭০ ডলার বা ৬৮০ টাকা) নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারী করে, যদিও শ্রীলঙ্কার চা-শ্রমিকরা আরও মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে। নেপাল সরকার ১৭ আগস্ট ২০২৩ চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০০ রুপি (৩.৮০ ডলার বা ৪৫০ টাকা) নির্ধারণ করে। ভারতের আসাম রাজ্য সরকার ১ অক্টোবর ২০২৩ ব্রহ্মপুত্র ভ্যালিতে ১৮ রুপি বৃদ্ধি করে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৫০ রুপি (৩ ডলার বা ৩৫২ টাকা) এবং বরাক ভ্যালিতে ২২৮ রুপি (২.৭৩ ডলার বা ৩২১ টাকা), পশ্চিমবঙ্গের চা-শ্রমিকরা ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে দৈনিক মজুরি ২৫০ রুপি (৩ ডলার বা ৩৫২ টাকা) পাচ্ছেন। আর কেরালার চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৪৩২.৬৫ রুপি (৫.১৮ ডলার বা ৬০৯ টাকা)। অথচ বাংলাদেশের চা-শ্রমিকরা ২০২২ সালের আগস্টে দীর্ঘ ১৯ দিন খেয়ে না খেয়ে জানবাজী রেখে রাজপথ-রেলপথ অবরোধের পাশাপাশি লাগাতার ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একপাক্ষিকভাবে মালিকদের সাথে আলোচনা করে ১৭০ টাকা মজুরি চাপিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের ধর্মঘট থেকে কাজে ফিরতে বাধ্য করা হয়। শ্রমিকরা আশায় ছিল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আবারও মজুরি বৃদ্ধি পাবে আর ১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ২৭ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত সময়ের জন্য বর্ধিত মজুরির বকেয়া (৬০৪ দিনদ্ধ৫০ টাকা) মোট ৩০,২০০ টাকা এরিয়ার হিসেবে পাবে। কিন্তু শ্রমিকদের ‘আশার গুড়ে’ বালি দিয়ে তৎকালিন শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর উদ্যোগে দালাল নেতাদের নিয়ে সমঝোতা করে ন্যায্য এরিয়ার পরিবর্তে থোক বরাদ্দ হিসেবে ১১,০০০ টাকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়; তাও আবার তিন কিস্তিতে প্রদানে নানা টালবাহনা চলে। এভাবে একজন শ্রমিকের হক ১৯,২০০ টাকা হিসেবে প্রায় এক লাখ চা-শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা ১৯২ কোটি টাকা মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির পরও বর্তমান মজুরির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও মজুরি বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ নেই। তাই বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬ জনের একটি পরিবারের ভরপোষনের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি আজ সময়ের দাবি। দাবি সমূহঃ-১) অবিলম্বে এনটিসির ১২ টি চা-বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি-রেশন পরিশোধ এবং বকেয়া পিএফ চাঁদা প্রফিডেন্ট ফান্ড অফিসে জমা নিশ্চিত করতে হবে।২) অবিলম্বে এনটিসির বোর্ড পুর্নগঠন করে অচলাবস্থা নিরসন করতে হবে।৩) চা ও রাবার শ্রমিকদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের খরচ হিসাব করে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। চা ও রাবার শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ রেশন হিসেবে একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল/আটা, ডাল, তেল, চিনি/গুড়, সাবান, চা-পাতা প্রদান করতে হবে।৪) আইন সকল বাগানের স্থায়ী ও ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের সমান মজুরি প্রদান করতে হবে। ক্লাস ক্যাটাগরির নামে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে বৈষম্য নিরসন করতে হবে।৫) শ্রমআইনের ধারা ২(২ক) এবং শ্রমবিধি-২০১৫ এর বিধি ১১১(৫) অনুযায়ী সকল শ্রমিককে সমান হারে উৎসব বোনাস প্রদান করতে হবে। হাজিরার উপর নির্ভর করে বেআইনীভাবে উৎসব বোনাস কর্তন করে শ্রমিক ঠকানো বন্ধ করতে হবে।৬) ২০২১-২০২২ মেয়াদে নির্ধারিত দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি হিসেবে বকেয়া মজুরি (৩০,২০০-১১,০০) = ১৯,২০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। অবিলম্বে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের নতুন মজুরি বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে নির্ধারণ করতে হবে।৭) ফুলতলা, তারাপুর, ডালুছড়া, রাজনগর, নয়াপাড়া, মৃত্তিঙ্গা, ইমাম-বাওনীসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে টালবাহনা বন্ধ করে নিয়মিত সাপ্তাহিক মজুরি পরিশোধ করতে হবে। চা-বাগানের ভূমি দখল ও বিক্রি, স্টেডিয়াম নির্মাণ, ইকোমিক জোনসহ বিভিন্ন প্রকল্প নির্মাণ করা যাবে না। লিজ শর্তানুযায়ী প্রতি বছর চা-বাগানের সম্প্রসারণ করতে হবে।৮) চা শিল্পে শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ এর ৪(৮) ধারা অনুযায়ী ৩ মাস কাজ করলে সকল শ্রমিককে স্থায়ী করতে হবে; সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদানে বেআইনী শর্ত বাতিল করে ধারা-১০৩(গ) অনুযায়ী বিনাশর্তে মজুরিসহ ছুটি দিতে হবে এবং ২৩৪ ধারা অনুযায়ী কোম্পানির লভ্যাংশের ৫% শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল ও অংশগ্রহণ তহবিলে প্রদান করতে হবে। চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি (প্রতি ২২ দিনে ১ দিন) প্রদানে বৈষম্যসহ শ্রম আইনের বৈষম্য নিরসন করতে হবে।৯) শ্রমিকদের নিকট হতে কর্তন করা পিএফ চাঁদা নিয়মিত ফান্ড অফিসে জমা দিতে হবে এবং প্রতি বছরের হিসাব সকল শ্রমিককে বুঝিয়ে দিতে হবে। ফান্ড অফিসকে ডিজিটাইলাজেশন করে প্রতি মাসে মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে শ্রমিকদের মাসিক হিসাব প্রদান করতে হবে।১০) মালিকদের একচ্ছত্র নিপীড়নের হাতিয়ার বাংলাদেশ বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬-এর ২৩ ও ২৬ ধারাসহ সকল কালাকানুন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন করতে হবে। অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ সংগঠন ও দরকষাকষি করার স্ব^াধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।১১) যুগ যুগ ধরে একই ভূমিতে বসবাসকারী চা-শ্রমিকদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষেতের জমির জন্য রেশন কর্তন বন্ধ করতে হবে।১২) বিশুদ্ধ পানীয় জল ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থাসহ চা-শ্রমিক বসত ঘর নিয়মিত সংস্কার করতে হবে। শ্রমিকের নিজ খরচে বসত ঘর সংস্কারের সমুদয় খরচ প্রদান করতে হবে।১৩) চা-শ্রমিকদের শিশু সন্তানের জন্য সেকশনে শিশু সদন নির্মাণ এবং মহিলা শ্রমিকদের জন্য সেকশনে বিশ্রাম ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।১৪) সরকারি আইন মোতাবেক মাতৃত্বকালীন ভাতা ৬ মাস এবং প্রত্যেক চা বাগানে এম্বুলেন্স প্রদানসহ একজন এমবিবিএস ও একজন এমবিবিএস (প্রসুতি বিশেষঞ্জ ) ডাক্তার, প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগ করে চা শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ জীবনের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থাসহ চা-শ্রমিক সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য সকল বাগানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রতি ভ্যালিতে সরকারি কলেজিয়েট স্কুল স্থাপন করতে হবে।১৫) শ্রম আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা নিরসনে ৯০ দিনের মধ্যে সকল মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে।১৬) চা-শিল্প রক্ষায় চা আমদানি ও কালোবাজারে অবৈধ চায়ের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। নিলাম বাজারে চায়ের মূল্য কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করে চা-শিল্প ধ্বংস করার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।১৭) ভারতের বিনাশুল্কে বা কম শুল্কে চা রপ্তানি এবং শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্র ব্যবহারের প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না। নো-ম্যান্স-ল্যান্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের চা-বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ আইনগতভাবে বন্ধ করার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।