চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের প্রথমদিনই বলেছিলেন, আমি এসি রুমে বসে থাকার মানুষ নই। আমি নিজে প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবো। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি কথা অনুযায়ি কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল সোমবার মেয়র নিজেই জামালখান ওয়ার্ডে হাজির হয়ে ওয়ার্ডের পরিছন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এক-এক করে নাম ধরে ডেকে হাজিরা নেন। কোনো ঘোষনা ছাড়াই আকস্মিক ওয়ার্ডে মেয়রের হানাতে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় চসিক মেয়র কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু স্থানে ময়লা-আর্বজনা দেখে এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি এবং ওয়ার্ডের সুপার ভাইজারকে দুইদিনের সময় বেধে দিয়ে হুশিয়ারি দেন। সেখানে জড়ো হওয়া উপস্থিত বাসিন্দাদের সাথেও কথা বলেন মেয়র। জানা গেছে, নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গতি বাড়াতে সেকেন্ডারি কয়েকটি ডাম্পিং স্টেশন বা এসটিএস নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। গণপূর্ত অধিদপ্তরের পরিত্যক্ত জায়গায় এসব এসটিএস নির্মাণে শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে। সূত্র জানায়, চসিকের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটির সভায় সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ১২ নভেম্বর টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই সভায়। এরমধ্যে এসটিএস নির্মাণের বিষয়টিও আছে। এসটিএস-এ ময়লা এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয় যার দুর্গন্ধ বাইরে যাবে না। বাসাবাড়ি থেকে ময়লা এনে এসটিএস-এ রাখা হবে। এরপর এসটিএস থেকে মূল বর্জ্যাগারে নেয়া হবে। এসটিএস নির্মাণের জায়গা চিহ্নিত করে দ্রæত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে লেখা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া রোববার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) কর্তৃক “চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প”-এর আলোকে ‘মহানগরের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামকে প্রকৃত গ্রিন, ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয় ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি নগরীর পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভূমিকা উল্লেখ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প-এর মাধ্যমে ‘সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন’ স্থাপনের জন্য চউকের সহযোগিতা কামনা করেন। চউক হল রুমে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন চউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম। অনুষ্ঠানে সিডিএ বোর্ড সদস্যগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাহিদুল করিম কচি, প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম, এডভোকেট সৈয়দ কুদরত আলী, মো. নজরুল ইসলাম, স্থপতি সৈয়দা জারিনা হোসেন এবং স্থপতি ফারুক আহমেদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, চসিক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম এবং চউক সচিব রবীন্দ্র চাকমা, চউক প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। সভায় “চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প-এর উপর তথ্য পরিবেশন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. আবু ঈসা আনছারী। এতে প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পুকুর, খাল, পাহাড়সহ পরিবেশগত দিকগুলোর সংরক্ষণে চউক ও চসিক এর কাজের সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে “চট্টগ্রাম শহরের খাল সংস্কার ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প” এর পরিচালক প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান কার্যক্রম বাস্তবায়ন তরান্বিত করতে, খাল পরিষ্কারের ‘টেকসই কার্যক্রম’ নিয়ে আলোচনা করেন এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনা ও খাল পূণঃ ভরাট প্রতিরোধে চসিকের সহযোগিতা কামনা করেন। সভাপতির বক্তব্যে চউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম আজকের অনুষ্ঠানকে আন্তঃকর্তৃপক্ষ সমন্বয়ের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন মাষ্টারপ্লান প্রকল্প বাস্তবায়নে তথ্য ও সম্পদের অবাধ বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। সভায় মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই চট্টগ্রাম মহানগর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।