চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করতে চান বলে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সোমবার (২৫ নভেম্বর) টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এ কথা জানান। সভায় উপস্থিত ছিলেন, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এবং প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদসহ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ছাত্ররা চট্টগ্রাম নগরীকে ক্লিন, গ্রিন, হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে মেয়রকে সহায়তার আশ্বাস দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের দাবির মধ্যে ছিল নগরী জুড়ে খেলার মাঠের সুবিধা বৃদ্ধি করা, বিপ্লব উদ্যানকে অবাধ বাণিজ্যিকীকরণ থেকে রক্ষা করে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নগরীজুড়ে যে সমস্ত নালা উন্মুক্ত রয়েছে সেগুলো উপর ¯ø্যাব নিশ্চিত করা, শহর জুড়ে ভেঙে যাওয়া সড়ক গুলোকে সংস্কার করা, চাঁদাবাজি-দখলবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আগ্রাবাদ মোড়ে অবৈধ হকার উচ্ছেদ করা, নগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনা, কিশোরগ্যাং কালচার বন্ধ করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, চট্টগ্রামের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, মাদক বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের যে ১১ জন শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারের একজন করে সদস্যর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, হয়রানিমূলক মামলা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ। ছাত্রদের বক্তব্য শ্রবণ শেষে মেয়র বলেন, আমি আপনাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। আপনারা যেসব দাবি জানাচ্ছেন, সেগুলোর অধিকাংশ আমি শপথের পরপরই চট্টগ্রামে আসার পর বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ইতোমধ্যে পাহাড়তলীর শেখ রাসেল শিশু পার্কের নাম পরিবর্তন করে ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছি। “আমার ইচ্ছা নগরীর ৪১ টি ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ গড়ে তুলব। কারণ আমি দেখেছি শিশুদের খেলার অধিকার নিয়েও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। টার্ফ গড়ে উঠার কারণে অস্বচ্ছল ঘরের ছেলেরা খেলতে পারছে না। এ কারণে আমার ইচ্ছা প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা। শিশুদের খেলার মাঠে ফিরাতে পারলে মাদক সমস্যা, কিশোর গ্যাং কমে আসবে। এছাড়া আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, জিয়া শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সও নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি তোমাদের বিপ্লব উদ্যানে গিয়েছি, সেখানে একটা স্ট্রাকচার করা হচ্ছিল সেটি ভেঙে দিয়েছি। আমি সরাসরি বলে দিয়েছি যে বিপ্লব উদ্যানে গ্রীন পার্ক হবে এবং সেখানে বিপ্লব উদ্যানের যে ঐতিহাসিক ভূমিকা সেটি সম্পর্কে কিছু স্মৃতিফলক থাকবে।” মেয়র আরো বলেন, আগস্ট মাসের যে গণহত্যা হয়েছে, সে গণহত্যায় শহীদদের আমি শ্রদ্ধা জানাই। আন্দোলন চলাকালে আহতদের আমি আমার দুইটা হসপিটাল ট্রিটমেন্ট এবং হলি হেলথ হসপিটালে চিকিৎসা দিয়েছি। ৫ই আগস্টের পরে প্রায় প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে আমি নিজে গিয়েছি আহতদের দেখতে। চোখের সমস্যা, গুলিবিদ্ধ, হামলার শিকার অনেকে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। আমি যথাসাধ্য সেবা দেয়ার, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে। সিটি গভার্নমেন্ট প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, নগর সরকার নাই চট্টগ্রামে। এ বিষয়ে কেউ কথা বলছে না। আমি একা কথা বলছি। নগর সরকার ছাড়া পরিকল্পিত উন্নয়ন শুধু চট্টগ্রামে না সারা বাংলাদেশে অসম্ভব।সবগুলো সেবা সংস্থা যদি সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কাজ না করে তাহলে কখনো পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব না। জলাবদ্ধতার প্রকল্প নিয়েও বৈষম্য হয়েছে। যে প্রকল্প চসিক করার কথা সেটা করছে সিডিএ। এখন এ প্রকল্প শেষ হলে হ্যান্ডওভার করবে চসিককে। কিন্তু এ প্রকল্প কীভাবে সচল রাখা যায়, কীভাবে এগুলোর ব্যয় নির্বাহ হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। পরিচ্ছন্ন বিভাগের কাজের তদারকিতে ছাত্রদের সহায়তা চেয়ে মেয়র বলেন, ছাত্ররা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমাদের পরিচ্ছন্ন বিভাগের যে কার্যক্রম চলছে তা ঠিকমতো হচ্ছে কী না তা তদারকি করতে পারে। ডেঙ্গু ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করতে পারে ছাত্ররা। এছাড়া স্থানীয় যে কোন সমস্যা আমাকে জানালে আমি সমাধানের উদ্যোগ নিব। “মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজ মুক্ত একটা নিরাপদ শহর তৈরি করতে চাই যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একটা নিরাপদ শহরে থাকতে পারি। এই কনসেপ্টের জন্য তোমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমি চাই যেখানে সন্ত্রাস হবে, চাঁদাবাজি হবে, যে করুক তোমরা সেখানে দাঁড়িয়ে যাবে। প্রয়োজনে আমাকে যদি তোমরা বল সেখানে আমি এসে তোমাদের সাথে সার্বিক সহযোগিতা করব।” চসিককে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি করতে নেয়া উদ্যোগ সম্পর্কে মেয়র বলেন, আমি বন্দর থেকে ১ শতাংশ হিস্যা পেতে কাজ করছি। এছাড়া, বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো থেকে ট্যাস্ক আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কাজ করছি। চসিককে ঠকিয়ে চসিকের যেসব ভূমি ও স্থাপনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে সেগুলো বাতিল করব। চসিকের মার্কেট ও দোকানগুলোর ভাড়া পুন:নির্ধারণ করা হবে।