ঢাকার রাজধানী প্রাণকেন্দ্র ধানমন্ডি লেকে জলাধারের পাশে গাছপালায় পাখির বাসা এক পরিচিত দৃশ্য। তবে রাজধানীর ধানমন্ডি লেকের পাশে দেখা মিলছে ব্যতিক্রম এক দৃশ্যের! এ যেন লেকের পাড়ে বইয়ের বাসা। লেকের একপাশে বিভিন্ন গাছে ঝুলে আছে বই রাখার ছোট ছোট বাক্স, দেখতে ঠিক যেন পোষা পাখির ঘরের মতোই। লেকে আসা দর্শনার্থীদেরও আকৃষ্ট করেছে এসব বইয়ের বাক্স। বই পড়াকে সহজ করার সুন্দর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকেই। লেকে আগতরা বলছেন, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের পার্কগুলোতেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে, পাঠকরাও উপকৃত হবেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যক্তি উদ্যোগেই বই পড়ার এই ব্যবস্থা করেছেন ধানমন্ডির বাসিন্দা জাকিয়া রায়হানা রুপা। প্রথমে লেকের পাশে একটি বাক্স স্থাপন করেন তিনি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করলে অন্যরাও এই ভালো কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আপাতত তিনটি বইয়ের বক্স বসানো হয়েছে। আরও ছয়টি বক্স বসানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এভাবে আরও বাড়বে বলে মনে করেন জাকিয়া রায়হানা রুপা।লেকের পাশে বইয়ের বক্স স্থাপনের ধারণাটা কীভাবে এলো জানতে চাইলে জাকিয়া রায়হানা রুপা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমি ফেসবুকে একজনের ভ্লগে দেখতে পাই জার্মানির বিভিন্ন পার্কে বড় বড় বুক সেলফ রাখা। সেখান থেকে অনেকেই বই পড়েন, আবার অনেকেই সেখানে বই ডোনেটও করেন। আমি ভাবলাম জার্মানিতে সম্ভব হলে বাংলাদেশে কেন হবে না। তাই আমি প্রথমে একটি বক্স বসাই এই ধানমন্ডি লেকে। যেহেতু এখানে আমার নিয়মিতই আসা হয়। আমি ছোট বক্স বাছাই করেছি, কারণ বড় সেলফ হলে দূরে দূরে বসাতে হবে। ছোট হওয়ায় অনেক জায়গায় এই বইয়ের ব্যবস্থা করা যাবে। তখন যে কেউ তার কাছ থেকেই বই নিয়ে পড়তে পারবেন।মূলত অবসর সময়টাতে যারা পার্কে একটু বিশ্রাম নেন, তাদের হাতের নাগালে বই পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ জানিয়ে তিনি বলেন, আমার প্রিয় লেখক মহিউদ্দিন মোহাম্মদ থেকে আমি অনুপ্রেরণা পাই। উনি সবাইকেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করেন। আমি মনে করি, যারা লেকে আসেন তারা হাতের নাগালের কাছে বই পেলে পড়তে আগ্রহী হবেন। তা এই পরিবেশটাও বই পড়ার জন্য চমৎকার। সবাই তো সঙ্গে করে বই নিয়ে চলেন না, তাদের জন্য এটি সহজ করবে।এসময় তিনি দেশে বিভিন্ন প্রান্তে এই উদ্যোগে অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সরকারকে উদ্যোগী হওয়ারও পরামর্শ দেন।লেকের পাশে বই পড়ার ব্যবস্থা দেখে আনন্দিত হচ্ছেন সময় কাটাতে আসা মানুষজনও। কেউ কেউ বই হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়ছেন। কেউ পাশের জনকে বই পড়ে শোনাচ্ছিলেন।লেকে ঘুরতে আসা চঞ্চল এদবর নামে এক যুবক বলেন, ‘এটা দারুণ একটা উদ্যোগ। কাজের ফাঁকে কারও সঙ্গে দেখা করতে বা ঘুরতে আসা হয় এই লেকে। তখন আমাদের সঙ্গে মোবাইল ছাড়া কিছু থাকে না। এই বই দেখে মোবাইল ছেড়ে বই পড়ার ইচ্ছে হলো। অন্তত কিছুটা সময় বইয়ের মাঝে সময় কাটানো গেলো। হয়তো কোন বই পড়া শুরু করলে কোনও না কোনোভাবে পুরোটা পড়ে শেষ করার আগ্রহ থাকবে। এভাবে আবারও বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হবে।স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে লেক দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মমতাজ আক্তার। এসময় বইয়ের বক্স দেখে আগ্রহ নিয়ে বই নিয়ে নিজের সন্তানকেও বই পড়ে শোনাচ্ছিলেন।তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের সন্তানদের হাতে রেগুলার কারিকুলামে বই ছাড়া অন্য কোনও বই তেমন একটা হাতে তুলে দেওয়া হয় না। তারাও সিলেবাসের বাইরেও অন্য বই পড়ে না। তাই নতুন বই পড়ার যে আনন্দ সেটা তারা পায় না। এই লেকে আজই দেখলাম পড়ার জন্য সুন্দর বুক সেলফে বই রাখা। আমার মেয়েও আগ্রহ দেখালো। সেখান থেকে মিসিল আলির বইটা নিয়ে কিছু পড়ার চেষ্টা করলাম, যেন ওর আগ্রহ তৈরি হয় বইটা পড়ার জন্য।লেকে ঘুরতে আসা অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন এই বই পড়ার ব্যবস্থাকে। তারা বলছেন, এই ব্যবস্থা প্রতিটি এলাকার পার্কে থাকলে দর্শনার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠতে সহযোগী হবে