নানা অভিযোগ তুলে সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নাটোর-১ আসনের ভোট পুনরায় গণনার  আবেদন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল। গতকাল মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার আবু নাছের ভূঁঞার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন দেন তিনি।
বৃহঃবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি দেশ-বুলেটিন প্রতিনিধি কে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঁঞা।
আবেদনে নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, আমি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক মনোনীত নৌকার প্রার্থী হিসেবে উল্লেখিত আসনে (নাটোর-১) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। আমার নির্বাচনী এলাকায় নৌকা প্রতীকে আমিসহ ঢেঁকি প্রতীকে কাজল রায়, লাঙ্গল প্রতীকে আশিক হোসেন, হাতুড়ি প্রতীকে ইব্রাহীম খলিল, ট্রাক প্রতীকে জামাল উদ্দিন ফারুক, মশাল প্রতীকে মোয়াজ্জেম হোসেন, কাঁচি প্রতীকে রমজান আলী সরকার, একতারা প্রতীকে লিয়াকত আলী এবং ঈগল প্রতীকে আবুল কালাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম লালপুর-বাগাতিপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী দ্বারা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেন। যে কোনো মূল্যে এই আসনে এমপি পদে জয়লাভ করবে বলে তিনি প্রচার করতে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালপুর-বাগাতিপাড়া আসনে সকল কেন্দ্রে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে লালপুর উপজেলার চংধুপইল ইউনিয়নের শোভ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুলপুর সরকারী কলেজ, চংধুপইল ইউনিয়ন পরিষদ, নেংগপাড়া দারুল সুন্নাত দাখিল মাদ্রাসা, নেংগপাড়া (টিনসেড বভবন) (মহিলা), নেংগপাড়া দারুস সুন্নাত দাখিল মাদ্রাসা, নেংগপাড়া (টিনসেড বভবন) (পুরুষ), বাঁশবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুলপুর মোশারফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, আড়বাব ইউনিয়নের আড়বার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোদাগাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষণবাড়িয়া চৌমহনী উচ্চ বিদ্যালুয়, ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ধুপইল উচ্চ বিদ্যালয়, রায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের জামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (নতুন ভবন), জামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরাতন ভবন), করমদোসি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৈপুকুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঁশবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রহিমানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তার নিযুক্ত সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী দ্বারা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আমার নিযুক্ত পোলিং এজেন্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলে আমি ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালামের চাইতে আনুমানিক ৪৫০০ ভোটে জয়লাভ করি। নির্বাচনে আমি জয়লাভ করেছি বুঝতে পেরে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম তার নিযুক্ত সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে উল্লেখিত ভোটকেন্দ্রে নিযুক্ত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের সাথে যোগসাজস করে উল্লেখিত কেন্দ্রে আমার নিযুক্ত পোলিং এজেন্টদের জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে গণনাযোগ্য অধিকাংশ ব্যালটসমূহ আমার পক্ষে গণনা না করে ঈগল প্রতীকে গণনা করে। সেইসাথে আমার পক্ষে গণনা যোগ্য ব্যালট বান্ডেল সমূহ আমার পক্ষে গণনা না করে ঈগল প্রতীকের বান্ডেল হিসেবে গণনা করে। এছাড়াও ঈগল মার্কা প্রতীকের গণনা যোগ্য নয় এমন ব্যালটসমূহ ঈগল প্রতীকে গণনা করে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেছেন।
আবেদনে তিনি আরও করেন, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের উক্ত কার্যকলাপ নির্বাচন আচরণবিধি বহির্ভূত এবং বেআইনি। ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালামের সঙ্গে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের ওই রূপ বেআইনি কার্যকলাপে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন ঘটে নাই। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তাই নাটোর-১ আসনে গেজেট প্রকাশ বন্ধ রেখে ভোটসমূহ পুনরায় গণনা হওয়া একান্ত আবশ্যক।
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বকুল দেশ-বুলেটিন প্রতিনিধি কে বলেন, ভোট গণনায় অনিয়ম হয়েছে বলেই আমি পুনরায় গণনার দাবিতে আবেদন করেছি। সঠিক গণনা হলে অবশ্যই আমি জয়লাভ করব।
প্রসঙ্গত, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ৭৭ হাজার ৯৪৩টি ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বকুল পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৯৪৭টি। তাদের ভোটের ব্যবধান ১৯৯৬।