পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি জমি ক্রয়ে পঞ্চাশ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ গেছে সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নের সন্ধ্যা নদীর পাড় সংলগ্ন নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ২ একর ৫৩ শতাংশের একটি জমি সরকারি বাজার মূল্যে পৌরসভার উন্নয়ন তহবিল থেকে ক্রয় করা হয়েছে ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকায়। পৌরসভার জন্য সরকারি মূল্যে ওই জমি কিনলেও জমির দাতা রোজিনা বেগমকে দলিলে লেখা প্রকৃত মূল্য না বলে তাকে দিয়েছেন মাত্র ১০ লাখ টাকা। জমি কেনার সময় স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়র গেলাম কবির তার মনোনীত একটি ব্যাংকে ওই নারীর নামে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলে প্রতরনার মাধ্যমে ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। ২০২৪ সালের ১৩ মে নেছারাবাদ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সাব-কবলা মুলে দলিলটি সম্পাদন করা হয়েছে। দলিলে গ্রহীতা স্বরূপকাঠি পৌরসভার পক্ষে সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের নাম লেখা হয়েছে। সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের নির্দেশে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান খান দলিলে লেখা জমির মূল্য ৫৯ লাখ ৩৮হাজার টাকা ওই মহিলার এ্যাকাউন্টে জমা করেন। পরে ওই নারী রোজিনার ব্যাংক এ্যাকাউন্টের চেক বইতে স্বাক্ষর নিয়ে পুরো টাকা তুলে নেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান। তবে, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, পুরো কাজ সাবেক মেয়র গোলাম কবির করেছেন। আমি কিছু জানিনা।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গত ২০২৪ ইংরেজি সালের ১৩ মে স্বরূপকাঠি পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডাম্পিং এর জন্য জলাবাড়ী গ্রামের রোজিনা বেগমের কাছ থেকে ২ একর ৫৩ শতাংশের একটি জমি কেনা হয়। যাহার গ্রহীতা স্বরূপকাঠি পৌরসভার পক্ষে সাবেক মেয়র গোলাম কবির। ওই বছরে সরকারি বাজার দর অনুযায়ি সাব-কবলা দলিল মুলে জমির মূল্য লেখা হয় ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। যাহার দলিল নাম্বার-১০৬৫। দলিল সম্পাদনের পূর্বে রোজিনাকে বিভিন্ন ধাপে ৫ লাখ টাকা দেয় স্বরূপকাঠি পৌরসভা। দলিল সম্পাদনের দিন ১৩ মে রোজিনার ব্যাক্তিগত এ্যাকাউন্টে একই দিনে ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জমা করে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান খান। পরে, মেয়র গোলাম কবিরের নির্দেশে ১৫ মে দলিল সম্পাদনের দুইদিন পরে রোজিনার চেক বইতে দুইটি স্বাক্ষর নিয়ে তার এ্যাকাউন্টে পাঁচ লাখ টাকা রেখে বাকি টাকা তুলে নেন পৌর সচিব মোঃ সাইফুর রহমান খান।
নেছারাবাদ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৩ মে স্বরূপকাঠি পৌরসভা পক্ষে মেয়র গোলাম কবিরের নামে সাব-কবলা দলিল দেন উপজেলার রাজবাড়ী গ্রামের রোজিনা বেগম। যে দলিলে মোট জমির পরিমান ২ একর ৫৩ শতাংশ। যাহার মধ্য নাল, ১৪৪.৫৭, বাগান ৬৫.৪৫৮, ভিটা ৪৩.৩৮৫ অংশে মোট দুই একর তিপান্ন। যাহার সরকারি মূল্য লেখা হয়েছে ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। যার দলিল নাম্বার- ১০৬৫।
জমির দাতা রোজিনা বেগম বলেন, জলাবাড়ীর নদীর পাশের ওই জমির পরিমান মোট তিন একর চৌদ্দ শতাংশ। স্বরূপকাঠি পৌরসভার নামে মোট ১৪ লাখ টাকায় জমিটি বিক্রি করার কথা হয়। ওই জমির ২ একর ৫৩ শতাংশ আমার নিজ নামে রেকর্ডভুক্ত। বাকি ৬০ শতাংশ জমি অন্য দুইজন শরীকের। জমি লেখাপড়ির দিন দুই শরীক বিদেশে থাকায় আসতে পারে নাই। তাই ওই ৬০ শতাংশ জমি বাদে বাকি আমার নামে রেকর্ডভুক্ত ২ একর ৫৩ শতাংশ জমির দলিল দিয়েছি স্বরূপকাঠি পৌরসভার নামে। আমাকে আমার অংশের জমির বাবদ মোট ১০ লাখ টাকা দিয়েছে মেয়র গোলাম কবির। টাকার লেনদেন হয়েছে স্বরূপকাঠি পৌরসভার মেয়রের অফিস কক্ষে বসে। মজিবুর রহমান এবং পৌরসভার সচিব মো:সাইফুর রহমান এর সব কিছু জানেন। রোজিনা আরো বলেন, জমি কেনা বেচার পূর্বে একটা বায়না হয়েছিল। তখন আমাকে তারা নগদ পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিল। দলিল লেখাপড়ির দিন ইন্দুরহাট ব্রাঞ্চে একটি একাউন্ট থাকা সত্ত্বেও পুনরায় তারা আমার নামে স্বরূপকাঠি ইসলামি ব্যাংকে একটি নতুন এ্যাকাউন্ট করিয়ে দেয়। সেই এ্যাকাউন্ট স্বরূপকাঠি পৌরসভার সচিব মো: সাইফুর রহমান খান ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা জমা দেয়। টাকা জমা করার পরে আমার চেকবইতে দু’টি স্বাক্ষর নিয়ে এ্যাকাউন্টে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা রেখে সব টাকা তুলে নেন তারা। এভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে অবশিষ্ট ৫ লাখ এবং বায়না করার সময় ৫ লাখ মোট ১০ লাখ টাকা আমাকে দিয়েছেন। এছাড়া আমাকে আর কোন টাকা পয়সা দেয় নাই।
এ ব্যাপারে জমির মধ্যস্থতাকারী মজিবুর রহমান বলেন, জমি কেনা বেচার সময় আমি ছিলাম। টাকা পয়সা লেনদেনের ব্যাপারে সাবেক মেয়র গোলাম কবির এবং পৌরসভার সচিব মোঃ সাইফুর রহমান খান করেছেন। লেনদেনের সময় আমাকে সামনে রাখেনি।
পৌরসভার সচিব সাইফুর রহমান খান বলেন, জমি ক্রয়ের সব টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এর সব কিছু তৎকালিন মেয়র গোলাম কবির এবং জমির মধ্যস্থতাকারী মো: মজিবুর রহমান করেছেন। জমি কেনার অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয় অনেক তথ্য সাবেক মেয়র মোঃ গোলাম কবির আমাকে বলেননি। তারা যদি কিছু গোপন করেন তাহলে আমার কিছু করার নেই।
স্বরূপকাঠি পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ গোলাম কবির জানান, ওই জমি রোজিনা বেগমের নিকট সরকারি মূল্য কেনা হয়েছে। বিধান অনুযায়ী বৈধভাবে দলিল হয়েছে। জমিটি ক্রয়ের সময় জমির মধ্যস্থতা মজিবুর রহমান নামে এক লোক করেছে। তার মাধ্যমে টাকা পয়সা লেনদেন করা হয়েছে। পৌরসভার সচিব সাইফুর রহমান সম্পূর্ণ বিষয়টি জানেন।