বগুড়ায় আদালতের নারী হাজতখানায় আলোচিত ধর্ষণ মামলাসহ ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে রাখার ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বগুড়ার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারী হাজতখানায় পুলিশের সহযোগিতায় শহর শ্রমিক লীগের নেতা তুফান সরকারকে রাখা হয় আদালতের দোতলায় এ হাজতখানায় এই ঘটনা ঘটে।এ ব্যাপারে তুফান সরকারের স্ত্রীর পক্ষের লোকজনেরা সবাই বিশিষ্ট ফেনসিডিল ব্যবসায়ী, স্ত্রী আইরিন আক্তার (২০), শাশুড়ি তাসলিমা আাক্তার (৪৫), শ্যালক নয়ন আকন্দ ওরফে আশিক (২৫), স্ত্রীর বড় বোন আশা (২৩) ও আইনজীবী সহকারি হারুনার রশিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেইসাথে পুলিশ সপারে নির্দেশে নারী হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এটিএসআই জয়নাল আবেদীন পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান। এই কমিটিকে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ আদালতের একটি মামলায় গতকাল সোমবার হাজিরা দিতে কোর্টে নেওয়া হয় অন্য মামলায় কারাগারে থাকা তুফান সরকারকে। হাজিরা শেষে তাকে আদালতের নারী হাজতখানায় রেখে দেয়া হয়। ওই সময় নারী হাজতখানায় তুফান সরকারের স্ত্রী আইরিন আক্তার, তার শাশুড়ি তাসলিমা খাতুন, শ্যালক নয়ণ আকন্দ ওরফে আশিক, তুফানের স্ত্রীর বড়বোন আশা ও আইনজীবী সহকারি হারুনার রশিদ ছিলেন। তারা ভিতরে থাকা অবস্থায় বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বর সরব হয়ে ওঠে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান জানান, আদালতের নারী হাজতখানায় নারীদের সঙ্গে একটি মামলার আসামি তুফানকে রাখা হয়েছিল। এখানে আইনত অপরাধ হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার জন্য নারী হাজতের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এটিএসআই জয়নাল আবেদীনকে পুলিশ লাইন্সে কো¬জড করা হয়েছে। সেইসাথে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সাথে ওই সময় নারী হাজতখানায় তুফান সরকারের স্ত্রী আইরিন আক্তার, তার শাশুড়ি তাসলিমা খাতুন, শ্যালক নয়ণ আকন্দ ওরফে আশিক, তুফানের স্ত্রীর বড়বোন আশা ও আদালতের আইনজীবী সহকারি হারুনার রশিদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
বগুড়ার কোর্ট ইন্সপেক্টর মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। দুপুরের মধ্যেই কারাগার থেকে আনা সকল হাজতিকে প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সাথে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগচোরে ঘটনাটি ঘটে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা সাংবাদিকদের বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের আরো যাদের গাফিলতির প্রমান পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষন করে তুফান সরকার। পরে শালিস ডেকে ধর্ষিতা ও তার মা’কে চরিত্রহীনা উল্লেখ করে তাদের মারধর করে এবং মা- মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার ও তার সহযোগীরা। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত অক্টোবর মাসে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।