শুনে অবাক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার এক মাত্র রেলওয়ে স্টেশন “বিসকা রেলওয়ে স্টেশন” থেকে বিক্রি হয়নি একটিও টিকিট। আর হবেই কিভাবে এ স্টেশনের দাপ্তরিক র্কাযক্রম বন্ধ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে, ফলেসেখানে ২টি লোকাল ট্রেন দিনে ১২ বার যাত্রাবিরতি করলেও যাত্রাবিরতির সময় খুব কম হওয়ায় যাত্রীরা দৌড়ে ওঠানামা করেন। স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় টিকিট কাটতে পারেন না যাত্র্রীগণ। ফলে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে নামার পর প্রায়ই নানা রকমের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
যাত্রীরা জানান, এ ধরনের বিড়ম্বনা এড়াতে বিসকার পরের স্টেশন শম্ভূগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন থামলে অনেকেই সেখান থেকে ময়মনসিংহের টিকিট সংগ্রহ করে আবার দৌড়ে ট্রেনে ওঠেন। এ কাজটি করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় এমকি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার প্রবল সম্ভবনাও থাকে। বিসকা স্টেশনে গতকাল সকালে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁরা জানান, বিসকা গ্রামটির সড়ক যোগাযোগ ভালো নয়। এ এলাকার মানুষের যাতায়াতের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন। প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে অসংখ্য মানুষ বিসকা থেকে ময়মনসিংহে যান। এছাড়াও এলাকায় প্রচুর কৃষি পণ্য চাষাবাদ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষি পণ্য বিক্রি করা হয় যার প্রধান পরিবহন হিসেবে এক সময় রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হত কিন্তু বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় পণ্য পরিবহনে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বিরম্বনায় পড়তে হয়। যা দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাব পড়ছে। এছাড়াও শম্ভূগঞ্জ ও গৌরীপুর জংশনের মধ্যবর্তী স্টেশন বিসকা হওয়ায় লোকাল ট্রেন ও আন্তনগর ট্রেন গুলোর মাঝে ক্রসিং এর প্রধান স্টেশন হিসেবে যুগের পর যুগ বিসকা রেলওয়ে স্টেশন ভূমিকা রেখে এসেছে কিন্তু বর্তমানে এ স্টেশনের দাপ্তরিক র্কাযক্রম বন্ধ থাকায় ট্রেন এর সময় বিলম্ব করে গৌরীপুর কিংবা শম্ভূগঞ্জ স্টেশনে ক্রসিং দিতে হচ্ছে ফলে ট্রেন যথাযথ সময়ে গন্তব্যে পৌছাতে পারছে না এবং যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা ভবনের বিসকা স্টেশনের বুকিং অফিস, স্টেশন মাস্টার অফিস, ব্যাটারি রুম, টিকিট কাউন্টার তালাবদ্ধ। ভবনের বেশ কয়েকটি কক্ষের দরোজা-জানালা নেই।যত্রতত্র মলত্যাগ ও ময়লা আবর্জনা ফেলে বিশ্রামাগারটি ভাগাড়ে পরিণত করেছে।এ বিষয়ে এলাকাবাসীদের একাংশ বলেন স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার পর আমরা একাধিকবার রেল মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য স্টেশনটি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে মানবন্ধন করেছি, কিন্তু এখন পযর্ন্তও এ ব্যাপারে রেল মন্ত্রণালয়ের কোন পদক্ষেপ দেখিনি। আদৌ এ স্টেশনটি পুণরায় চালু হবে কিনা এ নিয়েও সংশয় এলাকাবাসীর মনে।
বর্তমানে বিসকা অঞ্চলের প্রায় অধিকাংশ তরুন প্রজন্মের ফেইসবুক প্রোফাইল ঘেটে দেখা যায় এই স্টেশন চালু নিয়ে তাদের মনে সংশয়, স্থানীয়ভাবে মানবন্ধনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে স্টেশনটি পুণঃচালুর জুড়ালো দাবি,
ফেইসবুকে “সার্চ অব বিসকা ইউনিয়ন” নামক একটি আইডিতে এ নিয়ে লিখেন,
অবহেলায় আমি আজ কেন পরিত্যক্ত?
এলাকার লোকজন তাতে কী বিরক্ত?
এক জীবনে দিয়েছি আমি কত যে যাত্রী সেবা।
হঠাৎ আমার দরজায় এসে লাগালো তালা কেবা?
আমার এলাকায় মন্ত্রী হলো
পাঁচ বছরের মেয়াদ ফুরোলো!
তবুও আমার বন্ধ তালায় কেউ দিলোনা চাবি!
অথচ ছিলো দরজা খোলার কথা,ছিলো কত মানুষের দাবি।
কত নেতা দিলো কত প্রতিশ্রুতি,আমার দুয়ারে এসে।
কেউ নিলোনা কোন উদ্যোগ,আমায় ভালোবেসে!
সোনালী সময় কেটেছে কত আমার বারান্দা জুড়ে।
সুদিনের কথা মনে হলে মোর অন্তর শুধু পুড়ে।
কৃষ্ণচূড়ার এক গাছ যে ছিলো আমার উঠুন জুড়ে।
একদিন ঝড়ে পড়লো সে গাছ,গেলো আমারও কপাল পুড়ে!
মঙ্গল মিয়ার বসতো দোকান করতো জুতোয় কালি।
পোনা মাছের ব্যবসায়িরা পাতিলে বাজাতো তালি।
কুয়োটার পাশে বসতো এসে কত যাত্রী মোর।
কত গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি কাছে কিংবা দূর।
টুংটাং করে বাজতো ঘন্টা ট্রেনের খবর হলে।
মাস্টার সাহেব ক্লান্ত হতেন ট্রেনের খবর বলে।
খবর হতেই ধরতো সবে টিকেট কাটার লাইন।
বিনা টিকিটে চড়লে গাড়ি হতো অনেকের ফাইন।
সাত গেরামের যাত্রী এসে জমাতো এখানে ভীড়।
গাড়ি এলেই উঠতে নামতে সবে হতো অস্থির।
সচল রাখতে আমায় তখন চলতো জেনারেটর।
স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকতো যে মাস্টর।
উন্নয়নের দেশে পায়নি,উন্নয়নের ছুঁয়া।
চায়ের স্টলের গল্প শোনে সব মনেহয় ভুয়া।
আমার উঠুন জুড়ে ছিলো কত পদধ্বনি।
একটা সময় ছিলাম আমি সবার চোখের মণি।
ঘন্টা আমার ঝুলে আছে আজও কেউ বাজায়না আর!
আমার দরজা খুলবে আবার আছে এমন সাধ্য কার?
চারিদিকে কত আলো জ্বলে মোর শুধু আমার ঘরে আঁধার।
চারিদিকে শুনি কত অট্টহাসি,শুধু আমার সময় কাঁদার।
কত যাত্রী কত কোলাহল ছিলো আমার বুকে।
সোনালী অতীত সোনালী সময় ছিলাম বড় সুখে।
প্রকাশিত একটি কবিতাই বলে দেয় এ স্টেশনটি বিসকা তথা তারাকান্দা উপজেলার কতটুকু ঐতিহ্য ধারন করে ।
এলাকাবাসীদের জুড়ালো দাবী বিসকা রেলওয়ে স্টেশন পুণঃরায় চালু করা হোক।