ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ (সদর) আসনে তাঁর পরাজয়ের জন্য রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে দায়ী করেছেন। গতকাল দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে ব্যবহার করে লিটন নৌকা ডোবাতে সবকিছু করেছেন নির্বাচনে তার এমন বিপর্যয়ের কারণ কি? বাদশা বলেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাঠ দখল করেছিল, তাই এমন ফলাফল ।’ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীরা সুনির্দিষ্ট ভাবে কাঁচি প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করেন।
সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে সব ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুবিধাভোগীর কার্ড আটকে রেখে কাঁচি প্রতীকে ভোট দিতে চাপ দেন । নির্বাচনের দিন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজস্ব বাহিনী প্রতিটি ওয়ার্ডে নৌকা প্রতীকের ভোটারদের চিহ্নিত করে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহ করে। ক্রমাগত হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে ভোটের দিন ভোটাররা নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারেননি। যার প্রভাব পড়েছে ভোট প্রদানের হারে। রাজশাহী-২ আসনে এ কারণেই ভোটের হার ছাব্বিশ শতাংশের কাছাকাছি। বাদশার অভিযোগ, নৌকা প্রতীক’কে হারাতে শুরু থেকে বিপুল পরিমান টাকা ছড়ানো হয়েছে। কে বা কারা টাকা ছড়িয়েছেন, সেটি প্রকাশ্য। রাজশাহীর মানুষ যাকে ঠিকভাবে চেনেও না, তাকে বিজয়ী করতে ভোট গ্রহণেও কারচুপি করা হয়েছে ।
বাদশা বলেন, নৌকার পক্ষে যারা মাঠে নেমেছিলেন, তাদের নানাভাবে সিটি কর্পোরেশন থেকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্প সিডিসি’র কর্মীদের জোরপূর্বক কাঁচি প্রতীকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সিডিসি টাউন ফেডারেশন, সিএইচডিএফ, ক্লাস্টার ও সিডিসি কর্মীদের সরকারি সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষ প্রয়োজন মাফিক সুবিধা বন্ধের হুমকি দিয়ে কাঁচি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে ভোট প্রদানেও বাধ্য করা হয়। অর্থাৎ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে পুরোপুরি কাঁচি প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে এ নির্বাচন প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকার পক্ষে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদেরও এ নির্বাচনে পাশে পাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু লিটনের সরাসরি ও প্রত্যক্ষ মদদে আওয়ামীলীগের বড় অংশ নৌকার বিপক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেছে। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের নামে মাইকিং করে প্রকাশ্যে কাঁচি প্রতীকের জন্য ভোট চাওয়া হয়েছে । এ নিয়ে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলে।আওয়ামীলীগের স্থানীয় কর্মীদের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণাও চালানো হয়েছে দাবি করে বাদশা বলেন, আমি এমপি হওয়ার পর থেকে সিটি কর্পোরেশনকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেছি, স্কুল-কলেজের বহুতল ভবন নির্মাণে সরকারের সহযোগীতা এনে দিয়েছি। কিন্তু সেগুলো নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। আমি কিছু করিনি, এমন প্রচারণা চালিয়ে আওয়ামী লীগের একাংশের লোকজন ভোটারদের বিভ্রান্ত করেছে।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, শুধু লিটনের লোকজনের নেতিবাচক প্রচার নয়, নৌকা ডোবাতে সদর আসনে মৌলবাদীদের বিপুল অর্থও ব্যবহার হয়েছে। রাজশাহী-২ (সদর) নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী বলা হলেও শুরু থেকে আওয়ামী লীগের বড় অংশ যারা লিটনপন্থী হিসেবে পরিচিত তারা সঙ্গে ছিলেন না। জাসদও প্রার্থী দিয়েছিল। ফলে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেও বিপুল ভোটে হেরে গেছেন তিনি। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাঁচি প্রতীকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা ৫৪ হাজার ৯০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রডিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৬ ভোট।