লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল্লাহ খালেদ ও নিজাম উদ্দিনের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। রফিক উল্যা নামের এক ভূমিহীনকে খাস জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা ও তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগের মামলায় তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (কমলনগর) আদালতের বিচারক ভিক্টোরিয়া চাকমা এ নির্দেশ দেন।
রোববার সন্ধ্যায় আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) প্রদীপ শীল বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নুরুল্লাহ খালেদ এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তে নিজামের নামও এজাহারভুক্ত হয়। তারা আজ আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নুরুল্লাহ খালেদ চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহর ছেলে এবং ওই পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান। আর নিজাম উদ্দিন একই ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। মামলার বাদী রফিক উল্যা চরকাদিরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চরকাদিরা গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভূমিহীন রফিক উল্যাকে দক্ষিণ চরকাদিরা মৌজার দিয়ারা খতিয়ানের ৪৭৭ দাগে পাঁচ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত করে দেয় সরকার। আরও কিছু জমিসহ প্রায় ১৭ বছর ধরে তিনি সেখানে বসবাস করে আসছেন। পাশেই ৯৪৫ দাগে আরও ৩২ শতাংশ জমি বন্দোবস্তের জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু চর পাগলা গ্রামের আজিজুল হক, তার দুই ছেলে মিরাজ হোসেন ও ফিরোজ হোসেন এবং চরজাঙ্গালিয়া গ্রামের তোফায়েল আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে রফিক উল্যাকে ওই জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে আসছেন। আর ওই জমিতে থাকতে হলে তারা রফিকের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এর মাঝে ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা চাঁদা দাবি করেন। প্রতিবাদ করলে রফিক উল্যাকে ওই দিন মারধর করা হয়। তখন তার ঘরে থাকা এনআইডি কার্ড ও বয়স্ক ভাতার বই নিয়ে যান তারা।
পরবর্তীতে ঘটনাটি ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল্লাহ খালেদকে জানান রফিক উল্যা। নুরুল্লাহ খালেদ ঘটনাটির বিচার করবেন জানিয়ে ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিনসহ কয়েকজনের মাধ্যমে রফিকের কাছ থেকে অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নেন। পরে একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিশি বৈঠকেই অভিযুক্তরা রফিক উল্যার সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক শুরু করে। একপর্যায়ে তারা রফিক উল্যাকে চাঁদা না দিলে শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। এ সময় রফিক উল্যাকে গ্রাম ছাড়াসহ খুন করার হুমকিও দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১৬ অক্টোবর আজিজুল হক, নুরুল্লাহ খালেদ, আজিজুল হকের দুই ছেলে মিরাজ হোসেন ও ফিরোজ হোসেন এবং তোফায়েল আহমেদকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন রফিক উল্যা। পরবর্তীতে মামলার তদন্তে নিজামের নামও এজাহারভুক্ত হয়। মামলার অন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিলেও নুরুল্লাহ খালেদ ও নিজাম উদ্দিন জামিন নেননি।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহকে কল দিলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে মোবাইল ফোন রেখে বাড়িতে চলে গেছেন বলে জানান সেখানে দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি।