1. admin@desh-bulletin.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : দৈনিক প্রতিদিনের অপরাধ
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নীলফামারীতে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরিক্ষা শুরু পাহাড়গাঁও সমাজকল্যাণ পাঠাগারের কার্যকরি অফিস উদ্বোধন টঙ্গীবাড়ীতে প্রকাশ্যে কাটা হচ্ছে ফসলি জমিন বাধা নেই প্রশাসনের নেত্রকোনায় শিশু ধর্ষকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া মেঘনা ব্রিজের উপর রড বোঝাই ট্রাক উল্টে দীর্ঘ যানজট মুন্সিগঞ্জের গজরিয়ায় ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ হাসানুর রহমানের জন্মদিন আজ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পাশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পিডিএফ মঠবাড়িয়া নিউ মার্কেট খালের উপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পদুয়া বসাক পাড়ায় গীতাযজ্ঞ ও মহতী ধর্ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

যুব সমাজের স্কিন আসক্তি: কারণ, প্রভাব ও সমাধানের উপায়

সরকার শাহজাহান
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে
বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যাপক প্রসারের কারণে যুব সমাজের একটি বড় অংশ স্কিন-ভিত্তিক সামাজিক মাধ্যম (যেমন: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট) এবং অনলাইন গেমিং-এ আসক্ত হয়ে পড়ছে। এই আসক্তি শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই প্রতিবেদনে স্কিন আসক্তির কারণ, ক্ষতিকারক দিক এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
**স্কিন আসক্তি কী:
স্কিন আসক্তি বলতে অতিরিক্ত সময় ধরে স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটের স্ক্রিনে সামাজিক মাধ্যম, গেমিং বা ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে মগ্ন থাকাকে বোঝায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ২০১৮ সালের জুন মাসে “গেমিং ডিজঅর্ডার” বা গেম আসক্তিকে একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং এটি তাদের ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিজেস (ICD-11)-এ অন্তর্ভুক্ত করে (WHO, 2018)।
এই অন্তর্ভুক্তির ফলে, গেমিং ডিজঅর্ডারকে একটি স্বতন্ত্র মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, শিক্ষাগত বা পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে (WHO, ICD-11)।
তবে, WHO এখনো “ডিজিটাল আসক্তি” নামে কোনো স্বতন্ত্র রোগকে স্বীকৃতি দেয়নি। গেমিং ডিজঅর্ডারকে ডিজিটাল আসক্তির একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
স্কিন আসক্তির কারণ ও প্রভাব এবং এর সমাধান
স্কিন আসক্তির কারণ:
স্কিন আসক্তি বা স্ক্রিন ডিপেনডেন্সি বর্তমান যুগে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমের প্রতি মানুষের নির্ভরতা বেড়ে গেছে। এই আসক্তির মূল কারণগুলো হলো:
১. সামাজিক মাধ্যমের ডিজাইন: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীদের বেশি সময় ধরে রাখতে ডিজাইন করা হয়েছে। নোটিফিকেশন, স্ক্রলিং ফিচার এবং সুপারিশকৃত কনটেন্ট ব্যবহারকারীদের বারবার ফিরে আসতে বাধ্য করে। (Social Media and Mental Health*. (2021). Harvard University Press. )
২. মনোযোগের অভাব ও বিরক্তি: অনেকেই পড়াশোনা বা কাজের চাপ থেকে মুক্তি পেতে স্ক্রিনে সময় কাটান। একঘেয়েমি বা মানসিক চাপ থেকে বাঁচতে তারা সহজেই মোবাইল বা কম্পিউটারের প্রতি আকৃষ্ট হন।
৩. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: বর্তমান সময়ে সরাসরি যোগাযোগ কমে গেছে। মানুষ অনলাইন মাধ্যমে সময় কাটিয়ে একাকিত্ব দূর করার চেষ্টা করে, যা ধীরে ধীরে স্কিন আসক্তির দিকে নিয়ে যায়।
৪. বিনোদনের সহজলভ্যতা: ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো সময় মুভি, গেম, ইউটিউব ভিডিও ইত্যাদি দেখা যায়। এই অফুরন্ত বিনোদন মানুষকে স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘসময় ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৫. ডোপামিন নির্ভরতা: স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে ব্রেইনে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা স্বল্পমেয়াদী আনন্দ দেয়। ফলে মানুষ বারবার মোবাইল বা কম্পিউটারের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
স্কিন আসক্তির ক্ষতিকারক প্রভাব:
স্কিন আসক্তি দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. শারীরিক সমস্যা:
চোখের ক্ষতি:
দীর্ঘসময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর চাপ পড়ে, যা ডিজিটাল আই স্ট্রেন সৃষ্টি করে। ফলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া, ঝাপসা দেখা এবং মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। ড. প্যাট্রিস এ. হ্যারিস: আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি ড. হ্যারিস পরামর্শ দেন যে, স্ক্রিন টাইমের প্রভাব নির্ভর করে এটি কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর। তিনি বলেন, “প্রশ্ন হওয়া উচিত: স্ক্রিন টাইম কি আমাদের ঘুম, খাদ্যগ্রহণ, শারীরিক কার্যকলাপ এবং পরিবারের সাথে মানসম্মত সময় কাটানোর মতো স্বাস্থ্যকর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে?” (ama-assn.org)
ঘাড় ও কাঁধের ব্যথা:
মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় ভুল ভঙ্গিতে বসলে ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা হতে পারে, যা Text Neck Syndrome নামে পরিচিত। ফারিস আহমাদ খান ও সহগবেষকগণ: তাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিশু ও কিশোরদের মধ্যে স্ক্রিন আসক্তি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। তারা পরামর্শ দেন যে, কগনিটিভ-বিহেভিয়োরাল থেরাপি (CBT), মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস এবং স্ক্রিন টাইম মনিটরিং অ্যাপ্লিকেশনসহ বিভিন্ন হস্তক্ষেপ কার্যকর হতে পারে। (stratfordjournals.org)
স্থূলতা ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা:
অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে মানুষ শারীরিক কার্যক্রম কমিয়ে দেয়, যা স্থূলতা, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় (Journal of Adolescent Health. (2022). *The Impact of Social Media on Youth Mental Health ) ফারিস আহমাদ খান ও সহগবেষকগণ: তাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিশু ও কিশোরদের মধ্যে স্ক্রিন আসক্তি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। তারা পরামর্শ দেন যে, কগনিটিভ-বিহেভিয়োরাল থেরাপি (CBT), মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস এবং স্ক্রিন টাইম মনিটরিং অ্যাপ্লিকেশনসহ বিভিন্ন হস্তক্ষেপ কার্যকর হতে পারে। (stratfordjournals.org)
২. মানসিক সমস্যা:
উদ্বেগ ও বিষণ্নতা:
অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও একাকিত্বের সমস্যা বাড়তে পারে । (World Health Organization (WHO). (2020). *Guidelines on Physical Activity, Sedentary Behavior and Sleep for Children under 5 Years of Age )
ঘুমের ব্যাঘাত:
মোবাইল ও কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে নির্গত ব্লু লাইট মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। নরওয়েজিয়ান গবেষণা: একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিনের স্ক্রিন টাইম এবং বিশেষ করে সন্ধ্যায় স্ক্রিন ব্যবহারের সাথে ঘুমের গুণমান ও পরিমাণের মধ্যে নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। (frontiersin.org)
আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার ফলে হতাশা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়।
৩. সামাজিক সমস্যা:
পারিবারিক ও বন্ধুত্বের সম্পর্কে দুর্বলতা:
 মানুষ বাস্তব জীবনের পরিবর্তে ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় কাটালে পরিবারের সঙ্গে সময় কম কাটায়, যা সম্পর্কের দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
পড়াশোনা ও কর্মদক্ষতা হ্রাস:
বেশি সময় স্ক্রিনে কাটানোর ফলে একাগ্রতা কমে যায়, যার ফলে পড়াশোনা ও কাজের মান কমে যায়। শামিলা মানোরি ডি. এম. ও সহগবেষকগণ: শ্রীলঙ্কার একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্ক্রিন আসক্তির হার বেশি এবং এটি মানসিক চাপ, শারীরিক অনুশীলনের অভাব এবং দৈনিক দুই ঘণ্টার বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত। (ijcmph.com)
স্কিন আসক্তি প্রতিরোধ ও সমাধানের উপায়:
স্কিন আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু কার্যকর উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. ডিজিটাল ডিটক্স:
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় স্ক্রিন থেকে দূরে থাকার পরিকল্পনা করা উচিত। সপ্তাহে একদিন সম্পূর্ণ অফলাইন থাকার চর্চা করা যেতে পারে। প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর মার্গারেটা জেমস স্ক্রিন আসক্তি কমাতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন:
•  নির্দিষ্ট সময়ে প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন ।
• সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন ।
• সপ্তাহে একটি দিন স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন ।
• বই পড়া, সৃজনশীল কাজ বা শারীরিক কার্যক্রমে যুক্ত হোন (The Sun, 2023)।
২. শারীরিক কার্যক্রম:
নিয়মিত খেলাধুলা, যোগব্যায়াম ও হাঁটাচলা করার মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখা প্রয়োজন। এতে মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকেই উপকার পাওয়া যাবে। প্রফেসর জসল্ট ডেমেট্রোভিক্স: হাঙ্গেরির ইওটভোস লোরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেমেট্রোভিক্স উল্লেখ করেছেন যে, ইন্টারনেট সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর মধ্যে গেমিং সবচেয়ে বেশি সমস্যাজনক। তিনি বলেন, “গেমগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে ব্যবহারকারীরা দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় থাকে।” (sciencemediahub.eu)
৩. সচেতনতা বৃদ্ধি:
 স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলে ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম চালু করে শিক্ষার্থীদের ও কর্মীদের স্কিন আসক্তির ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন।
৪. পারিবারিক ভূমিকা:
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানো, একসঙ্গে খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা উচিত। মনোবিজ্ঞানী ড. অলিভিয়া ব্রুইলেট স্ক্রিন সময় কমাতে নিম্নলিখিত পরামর্শ দেন:
• প্রতিদিন স্ক্রিন ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা স্থাপন করুন
• ঘুমের আগে স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন যাতে ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয়।
• বাড়ির নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে স্ক্রিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করুন।
• নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সম্পূর্ণভাবে স্ক্রিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন (Business Insider, 2023)।
৫. টেকনোলজি ব্যবহার:
 স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে Digital Wellbeing (Android) বা Screen Time (iOS) অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই অ্যাপগুলো নির্দিষ্ট সময় পর নোটিফিকেশন দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়, যাতে স্ক্রিন ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
উপসংহার:
স্কিন আসক্তি বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে কিছু কার্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ডিজিটাল ডিটক্স, শারীরিক কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং পরিবারের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানোর মাধ্যমে স্কিন আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সচেতনতার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব এবং সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করা যেতে পারে।
এ বিভাগের আরো সংবাদ
© দেশ বুলেটিন 2023 All rights reserved
Theme Customized BY ITPolly.Com