সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল হাসান রঞ্জনের ৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি লাইভ বক্তব্য হৃদয়বিদারক হিসেবে ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত এক ভিডিও বার্তায় ফেসবুক নেটিজেনদের নজরে আসে। ভিডিওটিতে দেখা যায় মাত্র ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন এবং কমেন্ট করেছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। সকল কমেন্টেই সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জনের সাথে অন্যায় করা হয়েছে দাবি জানিয়ে সদ্য বহিষ্কৃত এই নেতাকে পুনরায় দলটিতে স্ব-পদে বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন। ৮ মিনিট ২৬ থেকে সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তায় রাশেদুল হাসান রঞ্জন বলেন, আপনারা জানেন আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, আমাকে কী কারনে বহিষ্কার করা হয়েছে সেটাই আমি জানিনা। সেই সাথে নামমাত্র অভিযোগ নয়, প্রমাণ দিয়ে বহিষ্কার করতে হবে। আজকে আমার দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবন তার অর্ধেক জীবন জেলে কেটেছে। আজকে সেই জীবন থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার কলিজা ছিড়ে দেওয়া হয়েছে। আমার অস্তিত্বকে বিলীন করে দেয়া হয়েছে। কী কারনে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, আমি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছি বলে? আমি জেলা বিএনপির সম্মেলন চেয়েছি ভোটের মাধ্যমে কমিটি চেয়েছি এই কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে? এর জন্যই আমাকে জঘন্য অপবাদ দিয়ে বহিষ্কার করা হলো? দলের লোকজন এত বড় বেইমানি করলো আমার সাথে, আমার পিছনে লোক আসে আমার জনপ্রিয়তা বেশি এটাই কি আমার দোষ? আমার জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দদের কাছে প্রশ্ন সেই সাথে জেলার সকল গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আমার অনুরোধ আমার বিরুদ্ধে যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে তার একটি প্রমাণ আমাকে দেখান? একটা প্রমাণ আপনারা সংগ্রহ করুন এবং আমাকে প্রমান দেখান আমার সারা রাজনৈতিক জীবনে এমন কোন অপরাধ করেছি কিনা? বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি আমি, খামোস হয়ে গিয়েছিলাম হাসিনা পালানোর পরে। আমি বাড়ির গেটে এবং বাড়ির বাইরে কোথাও যাইনি। তখন কিন্তু সবাই উল্টাপাল্টা কাজ করতেছিল আমি বাহিরে এই কারণে যাইনি যে বাহিরে গিয়ে কাউকে থামাতে পারবো না। কিছু করতে পারবো না। আমি আবারো চ্যালেঞ্জ করে বলছি আমাকে একটা প্রমাণ দেখান আমাকে যে অপরাধে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তার শুধুমাত্র একটি প্রমাণ চাই। জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দদের বলছি আমাকে যে অপরাধে শাস্তি দিয়েছেন তার একটি প্রমাণ সংগ্রহ করুন। সিরাজগঞ্জের অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে তাদের কাজে লাগিয়ে হলেও আমাকে একটি প্রমাণ দিন। আমি যে অপরাধ করিনি সেই শাস্তি আমাকে কেন দেওয়া হল। আমাকে মানুষের মধ্যে ছোট করা হলো। সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ছোট করা হলো। আমার বউ বাচ্চাদেরকে ছোট করা হলো। আজকে আমার জন্য আমার বউ চাকরি হারালো ১৬ বছর পৌর সভায় চাকরি করলো সেই চাকরি আর নাই। আজকে আমার বাপের দেওয়া বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমানে মানুষ বাড়ি করছে আর আমি বিক্রি করছি। গত ১৭ বছর জেল খাটতে গিয়ে অন্যায়ের শিকার হতে হয়েছে। আমার বউ এর চাকরি হারিয়েছে বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। ১৭ বছর কারাগারে থাকার কারণেই ২২ লক্ষ টাকা ঋণ হয়েছিলাম সেটা বিক্রি করে ছোট্ট একটি জায়গায় কিনেছি এবং টিনের ঘরে বসবাস করি। আমার ঘরে এখন বৃষ্টির পানি পরে বিশেষ করে ৪ তারিখ ও ৫ তারিখে যে হামলা হয়েছে তার কারণে টিনের ঘর ফুটো হয়ে গিয়েছে। আমার দুইটা ছেলেকে ঢাকায় পড়তে দিয়েছি কত কষ্ট করে তারা লেখাপড়া করছে আমি কোন খরচ দিতে পারি না। সকল পিতা-মাতা সন্তানদের লেখাপড়া খরচ দেয়। আমার সন্তান প্রাইভেট পড়িয়ে খুব কষ্টে লেখাপড়া করছে। সারা জীবন আমার সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য একটি কম্পিউটারও কিনে দিতে পারি নাই। অনেক সময় ৫০০ টাকা চাইলেও দিতে পারি নাই। আর আজকে আমাকে এই অপবাদ দেয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট এর পরে অনেকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আমার কোন পরিবর্তন আসেনি। আমার স্ত্রীর গলায় একটি স্বর্ণের চেন নাই যেটা প্রতিটি মেয়ের গলায় থাকে। তার কানে দুই আনা সোনার দুলও নেই। আমার এত কষ্টের জীবন আমি কাউকে বুঝতে দেই নাই হাসি মুখে জীবন পার করেছি। আমি আবারও সকলের কাছে অনুরোধ করছি বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমার জেলার বিএনপি নেতাদের কাছে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, বিএনপির নেতা রানা, ওমর, সুইট, সবুজ, মুন্সি জাহিদ আলম তোমাদের কাছে আমার প্রশ্ন তোমরা সবাই মিলে একটা প্রমান আমাকে দেখাও। তাহলে আমি সান্তনা পাবো। আজকে আমি মারা যাব। আমার লাশ বিএনপির অফিসে যাবে না। আমার কফিনের উপরে দলের পতাকা আসবে না। এটা আমি ভাবতেই পারছি না। দীর্ঘ ৪০ বছর একসাথে রাজনীতি করেছি আপনাদের কি একবারও বুক কাপলো না? আমার এমন কষ্ট হয়েছে যে আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছি। সেদিন আমার ছেলে, বউ আমাকে পাহারা দিয়েছে। আমি নানা সমস্যায় ভুগছি যে কোন মুহূর্তে মারা যেতে পারি এমন কলঙ্ক নিয়ে মারা যেতে হবে আমি বুঝতে পারিনি। যাই হোক সবার মঙ্গল ও সুস্থতা কামনা করছি। উল্লেখ্য চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে গত ৫ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির এই নেতাকে বহিষ্কারের জন্য জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু স্বাক্ষরিত সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দলটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এদিকে, রাশেদুল হাসান রঞ্জন বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করেছেন এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ এবং সততা নিয়ে চলেছেন বলে দলের ভিতরে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনায় রয়েছেন তার কিছু বার্তা এই ভিডিওতে কমেন্ট করেছেন নেটিজেনরা।