দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন এক ভয়াবহ দৃশ্যের জন্ম হচ্ছে—ঘর ভেঙে দিচ্ছে প্রশাসন। সরকারি খাসজমি উদ্ধারের নামে ভেঙে ফেলা হচ্ছে সাধারণ মানুষের মাথার উপর সামান্য ছাদ, যা তারা জীবনের সঞ্চয় কিংবা ঋণের টাকায় বানিয়েছিল। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এই স্থাপনাগুলো যখন নির্মিত হচ্ছিল, তখন কেন প্রশাসন নীরব ছিল? তখন তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখা হয়েছিল কিনা, সেই প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।
এটি সত্য যে সরকারি জমি ব্যক্তিগত দখলে থাকা বৈধ নয়। কিন্তু একই সাথে এটাও সত্য যে, এসব গরিব মানুষ তাদের ক্রয়ক্ষমতার অভাবে কিংবা বাপ-দাদার সময় থেকে দখলকৃত জমিতে মাথার গোঁজার ঠাঁই গড়েছিল। প্রশাসন কি কখনো ভেবেছে—এদের ঘর ভেঙে দিলে তারা যাবে কোথায়?
দুঃখজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, যাদের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকা, যারা বনাঞ্চল কিংবা সরকারি জমির বিশাল অংশ দখল করে রেখেছে, তাদের স্থাপনাগুলোর দিকে প্রশাসনের তেমন কোনো নজর নেই। তাদের বিলাসবহুল রিসোর্ট, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, শপিং মল দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে। ভাঙা হচ্ছে শুধু সেই গরিবের কুঁড়েঘর, যে কিস্তিতে কিস্তিতে ঋণ শোধ করে ইট-সিমেন্টের দেয়াল তুলেছিল।
এটাই হলো আমাদের সমাজের নির্মম বৈষম্য—দুর্বলদের উপর আইন কঠোর, আর শক্তিশালীদের জন্য আইন যেন অদৃশ্য।
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন থেকে যায়:
যাদের ঘর ভেঙে দিচ্ছেন, তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছেন কি?
যদি এই ঘরগুলি অবৈধ হয়, তবে নির্মাণের সময় কেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি?
বড়লোকদের অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে একইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তো?
সর্বশেষে, আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি—তিনি যেন গরিব, নির্যাতিত মানুষগুলোর সহায় হন এবং এই বৈষম্যের শিকড় উৎপাটন করেন। আমিন।
ছবি: শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুরগীবাজার গ্রাম।